দেশে ব্রাহমা জাতের গরু উন্নয়নে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। প্রকল্পে এত টাকা খরচ করা হলেও ব্রাহমা দেশে কার্যত নিষিদ্ধ।
‘বিফ ক্যাটেল ডেভেলপমেন্ট’ নামের প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৮ সালের জুনে। প্রকল্পের সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলে, মাংস উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে ব্রাহমা জাতের গরুর উন্নয়নে বিজ্ঞানভিত্তিক সংকরায়ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা অপরিহার্য।
প্রকল্পে ইতিবাচক ফলাফল আসার পরও দেশে ব্রাহমা আমদানি ও লালন-পালনে আইনি জটিলতা রয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পে এত টাকা খরচ করে কী লাভ হলো, সে প্রশ্ন আছে।
ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বেশি হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জাতটির উৎপত্তি ভারতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই থেকে তিনটি জাতের সংমিশ্রণে এটিকে উন্নত করা হয়। দুই থেকে আড়াই বছরের দেশি গরুর ওজন যেখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ কেজি হয়, সেখানে ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেকোনো প্রজাতির ষাঁড় বা বীজ (সিমেন) আমদানির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। সে জন্য আমদানিকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রেগুলেটরি কমিটি (এনটিআরসি) আবেদন যাচাই-বাছাই করে। এনটিআরসির সুপারিশের ভিত্তিতে অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নেয়, আমদানির অনুমতি দেবে কি না। তবে অধিদপ্তর কখনো ব্রাহমা জাতের গরু বা বীজ আমদানির অনুমতি দেয়নি। ব্রাহমা দেশে লালন-পালন নিষিদ্ধ কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আইন-নীতিমালায় নেই।
২০১৬ সালে বেসরকারি পর্যায়ে গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার সংশোধিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালায় ব্রাহমার পরীক্ষামূলক পালন বৈধ রাখা হয়। তবে ব্রাহমার বাণিজ্যিক পালন বা বীজ আমদানির বিষয়ে নীতিমালায় কিছু বলা হয়নি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নীতিমালা প্রণয়নের তিন বছর আগে থেকে ‘বিফ ক্যাটেল ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৮ জেলায় ব্রাহমা জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছিল। ২০১৮ সালে প্রকল্প শেষ হলে নীতিমালা আর সংশোধন করা হয়নি। প্রকল্প শেষ হলে অধিদপ্তরে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একটি পক্ষ মনে করে, মাংসের চাহিদা মেটাতে ব্রাহমার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। আরেকটি পক্ষের মত, ব্রাহমার সম্প্রসারণ হলে দুগ্ধ উৎপাদন ব্যাহত হবে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ব্রাহমার বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে আগের আইন-নীতিমালা অনুযায়ীই বিষয়গুলো চলছে।
ব্রাহমার প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহমাসহ যেকোনো জাতের গরু বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের আগাম অনুমতি নিতে হয়। তবে অধিদপ্তর কখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্রাহমা গরু বা বীজ আমদানির অনুমতি দেয়নি।