ফরিদপুরে কেঁদে এবং সমর্থকদের কাঁদিয়ে নিজ সংসদীয় এলাকার (ফরিদপুর–২ আসন) নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ালেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুল। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামে নিজ বাড়িতে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে নগরকান্দা ও সালথার নেতা-কর্মীদের বিদায় জানান শহীদুল। পরে সদরপুর, চরভদ্রাসন ও ভাঙ্গার বিএনপি ও কৃষক দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের নেতা হিসেবে শহীদুল ইসলামকে বরণ করে নেন।
অনুষ্ঠানে শহীদুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি নগরকান্দা-সালথা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এলাকা ফরিদপুর-২ ছেড়ে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের জন্য কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। এ সময় শহীদুলকে ঘিরে তাঁর সমর্থকেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একপর্যায়ে শহীদুল নিজেও আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনে কে বিএনপির প্রার্থী হবেন, এ নিয়ে শহীদুলের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) শামা ওবায়েদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। দুজনের বাড়িই নগরকান্দা। এলাকায় শক্তি প্রদর্শনের জেরে গত ২১ আগস্ট দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় ওই রাতেই কেন্দ্রীয় বিএনপি শহীদুল ও শামা দুজনকে দলীয় প্রাথমিক পদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়। তবে গত ১০ নভেম্বর উভয়ের ক্ষেত্রে এ স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়।
তবে দুই নেতার এ বিরোধ অব্যাহত ছিল। বিশেষত সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ ও হাতুড়িপেটার ঘটনাও ঘটেছে।
শহীদুলকে ঘিরে তাঁর সমর্থকেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একপর্যায়ে শহীদুল নিজেও আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দার কোনাগ্রামে নিজ বাড়িতে
এলাকার কর্মী-সমর্থকদের বিদায় জানিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে তাঁর সহকর্মীদের চোখের পানি সবচেয়ে মূল্যবান। আজ আমার জন্য কত মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন, কাঁদছেন। রাজনীতি করেছি বলে এত আবেগ ভালোবাসা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এই নগরকান্দায় এত যুদ্ধ, এত সংগ্রাম, আপনারা জানেন এখানে আরও একজন মানুষ আছেন। তিনিও অনেক বড় নেতা। আমার পদ স্থগিত হয়েছিল, আমি কাউকে কিছু বলিনি। শুধু আমার নেতা তারেক রহমানকে বলেছি, “আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করেন।” তিনি তাই করেছেন। উনি জানেন ফরিদপুরে রাজনীতি কেমন, নগরকান্দার রাজনীতি কেমন।’
আবেগঘন কণ্ঠে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তারেক রহমান আমাকে ফরিদপুর-৪ আসনের জন্য কাজ করার কথা বলেছেন। বলেছেন, “তুমি ওখানে কাজ কর। তোমার জন্য যা যা করতে হয়, তা আমি করব।” আমি আমার নেতার কথা ফেলতে পারি নাই। সম্পর্ক হয় আদর্শের। এ সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চাইতে অনেক মূল্যবান।’
একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘নগরকান্দার বন্ধুদের বলি, দলের এ সিদ্ধান্ত আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। দলের বাইরে যাব না। কপালে যা আছে, আল্লাহ যা লিখে দিয়েছেন, নেতা যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন।’
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ফরিদপুর-২ ছেড়ে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের জন্য কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন শহীদুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেলে নগরকান্দার কোনাগ্রামে নিজ বাড়িতে
তাঁর অবর্তমানে তাঁর সমর্থকদের কেমন সমস্যা হতে পারে, তার বর্ণনা করে শহীদুল বলেন, ‘আমি জানি, আপনাদের অনেক সমস্যা হবে। লাঞ্ছনা–গঞ্জনা–অপমান সহ্য করতে হবে। দয়া করে একসঙ্গে থাকবেন। কেউ কাউকে ছাইড়া যাইয়েন না। “ডিভাইড অ্যান্ড রুল” বলে একটা কথা আছে। আপনারা যদি একসঙ্গে থাকেন, ঐক্যবদ্ধ থাকেন, আপনাদের বাদ দিয়া রাজনীতি হবে না, নির্বাচন হবে না। যদি ভাগ হইয়া যান, তাহলে গঞ্জনা লাঞ্ছনা অপমান আপনাদের ওপর নাইমা আসবে।’
‘সংঘাত সহিংসতা রক্তপাত আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না’ মন্তব্য করে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের কথা ভাবলে আমার হৃদয় ভেঙে যায়, বুক বিদীর্ণ হয়ে আসে। তারপরও সবকিছু মেনে নিতে হয়, মৃত্যুও মেনে নিতে হয়। জায়গা শূন্য থাকবে না। আপনাদের ভেতর থেকে আগামী দিনে নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। মনে রাখবেন, কোনো জায়গায় অন্যায় করে, জুলুম করে কেউ কোনো দিন টিকে থাকতে পারে না।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত হোসেন, পৌর বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদিউজ্জামান, সদস্যসচিব তরিকুল ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলামের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে তাঁকে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির নেতা হিসেবে বরণ করেন নেন। এ সময় সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গার কৃষক দলসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।