বগুড়া কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালানো এক কয়েদি মেয়রের ছেলে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 26-06-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালানোর পরপরই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে মো. জাকারিয়া বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে। এক স্কুলছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অন্য তিন আসামি হলেন বগুড়ার সদর উপজেলার ফরিদ শেখ, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু ও নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার আমির হোসেন।

ওই চারজন গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটের দিকে বগুড়া কারাগারের ছাদ ফুটো করে রশির মাধ্যমে প্রাচীর টপকে পালান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ বুধবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারের মাছের আড়ত এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আজ সকালে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামিকে ১ জুন থেকে বগুড়া কারাগারের কনডেম সেলে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাহালু উপজেলায় স্কুলছাত্র নাইমুল ইসলাম ওরফে নাইমকে (১৩) অপহরণের পর হত্যা এবং ইটভাটায় লাশ পুড়িয়ে ভস্মীভূত করার দায়ে মো. জাকারিয়ার মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গত বছরের ৬ জুলাই উপজেলার উলট্ট বাজার থেকে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

ওই চার কয়েদি গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটের দিকে বগুড়া কারাগারের ছাদ ফুটো করে রশির মাধ্যমে প্রাচীর টপকে পালান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজ বুধবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারের মাছের আড়ত এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

নিহত নাইমুর কাহালু উপজেলার রুস্তমচাপড় গ্রামের রফিকুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে। সে কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল সকালে স্কুল ও কোচিং করতে যাওয়ার পথে অপহৃত হয় নাইমুল। অপহরণকারীরা তাকে একটি সারের দোকানে আটকে রেখে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। চার দিনের মাথায় ৯ এপ্রিল মুক্তিপণের পাঁচ লাখ টাকা নেন তাঁরা। কিন্তু অপহরণকারীদের চিনে ফেলায় সারের দোকানে গলায় রশি পেঁচিয়ে মাইমুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। লাশ সারের বস্তায় ভরে মো. জাকারিয়ার বাবার ইটভাটার আগুনে ভস্মীভূত করা হয়। এ ঘটনায় নাইমের বাবা রফিকুল ইসলাম ১০ জনকে আসামি করে কাহালু থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর ৬ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন আদালত। মো. জাকারিয়াসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অন্য আসামিদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

ফরিদ শেখের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার কুটুরবাড়ি এলাকায়। জমিজমা নিয়ে এলাকার ইয়াকুব আলী শেখের সঙ্গে বাদশা শেখের পরিবারের বিরোধ ছিল। এর জের ধরে ২০১৯ সালের ৬ জুন দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে আল আমিন (১৮) নামের এক তরুণকে ধারালো অস্ত্র (সুলপি) দিয়ে তাঁর পেটে আঘাত করেন বাদশা শেখ। পরে আল আমিন মারা যান। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর বাদশা শেখকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

নজরুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকায় এবং আমির হোসেনের বাড়ি মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকায়। ২০১৪ সালে ভূরুঙ্গামারীর সীমান্তবর্তী দিয়াডাঙ্গা গ্রামে ডাকাতি ও চার খুনের মামলায় তাঁরা দুজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতে দিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুলতান আহমেদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ সময় ডাকাত দল সুলতান মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী হাজেরা বেগম, তাঁদের দুই নাতনি রোমানা ও আনিকাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত সুলতান আহমেদের ছেলে হাফিজুর রহমান ভূরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম, আমির হোসেনসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক।


 

শেয়ার করুন