ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পথে চলাচলকারী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিরতিহীন। অর্থাৎ, যাওয়া-আসার পথে সেটি কোথাও থামে না। এই পথ যেতে ট্রেনটির সময় লাগার কথা ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। বিরতিহীন বলে অন্য ট্রেনের চেয়ে এটির ভাড়া বেশি।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস গত ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে যাওয়ার পরই ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। মেরামতের পর যাত্রী নিয়ে ওই দিন প্রায় তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছায়।
শুধু সোনার বাংলা নয়। একই দিন ঢাকা-নোয়াখালী পথের আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস কুমিল্লার রাজাপুরে যাত্রী নিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। মেরামত করে ট্রেনটি চালাতে বাড়তি সময় লাগে সোয়া তিন ঘণ্টা। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ আন্তনগর, লোকাল, মেইল কিংবা মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় বিকল হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ ও রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলওয়ে ‘লাইনচ্যুত’ হয়েছে মূলত ভুল পরিকল্পনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপব্যয়ের কারণে। এর দায় বর্তায় মূলত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নূরুল ইসলাম সুজন ও মুজিবুল হকের ওপর।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত ডিসেম্বর মাসে রেলের পূর্বাঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ৩১টি যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়। একই মাসে পূর্বাঞ্চলে মালবাহী আরও সাতটি ট্রেন বিকল হয়। অন্যদিকে ডিসেম্বরে পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ) ১১টি যাত্রীবাহী ও দুটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়। সব মিলিয়ে ওই মাসে ৪২টি যাত্রীবাহী ও ৯টি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন চলাচলের পথে বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
চলতি পথে ট্রেন বারবার বিকল হওয়ার বড় কারণ ইঞ্জিনগুলো অনেক পুরোনো। নতুন কেনা ইঞ্জিনও বিকল হচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হলেও নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণে খরচ করা হয়েছে বেশি। কিন্তু তার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন ইঞ্জিন কেনা হয়নি। ফলে রেলপথ বাড়লেও চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা কমেছে।
বিশেষজ্ঞ ও রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলওয়ে ‘লাইনচ্যুত’ হয়েছে মূলত ভুল পরিকল্পনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপব্যয়ের কারণে। এর দায় বর্তায় মূলত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নূরুল ইসলাম সুজন ও মুজিবুল হকের ওপর।
নতুন ইঞ্জিন কেনার চেষ্টা চলছে। তবে তা সময়সাপেক্ষ। পুরোনো ইঞ্জিন মেরামতের কারখানার সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০১২ সালের দিকে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলত। বর্তমানে চলছে ২২৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন। বন্ধ আছে ৯৩টি। অবশ্য কাগজে-কলমে ট্রেনের সংখ্যা দেখানো হয় ৩২১। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু আন্তনগর ট্রেন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেন।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন ১২টি ট্রেন চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে গাজীপুর পথে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন বেশি। তা না হলে বন্ধ ট্রেনের সংখ্যা আরও বেশি দাঁড়াত।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল নীতি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্নীতির কারণে রেলের আজকের দুরবস্থা। ইঞ্জিন–সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, নতুন ইঞ্জিন কেনার চেষ্টা চলছে। তবে তা সময়সাপেক্ষ। পুরোনো ইঞ্জিন মেরামতের কারখানার সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আগের ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে যাতে এ রকম না হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্ধ কমিউটার ট্রেন চালুর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে থাকা ৩০৬টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১১টি দীর্ঘদিন ধরেই বিকল। সেগুলো আর মেরামত সম্ভব নয় বলে সূত্র জানিয়েছে। বাকি ২৯৫টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২৮-৩০ শতাংশ পালাক্রমে মেরামতে থাকে। কার্যত নিয়মিত ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায় ২০০টির মতো ইঞ্জিন।
বারবার ইঞ্জিন বিকল, বাতিল হয় যাত্রাও
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় রেলবহরে ইঞ্জিন ছিল ৪৮৬টি। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০৬টিতে। এর ৬০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ, অর্থাৎ ২০ বছরের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে।
বর্তমানে থাকা ৩০৬টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১১টি দীর্ঘদিন ধরেই বিকল। সেগুলো আর মেরামত সম্ভব নয় বলে সূত্র জানিয়েছে। বাকি ২৯৫টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২৮-৩০ শতাংশ পালাক্রমে মেরামতে থাকে। কার্যত নিয়মিত ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায় ২০০টির মতো ইঞ্জিন।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ৭০টি নতুন ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। আর ৩০টি পুরোনো ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দিয়েছে ভারত। বর্তমানে ইঞ্জিন কেনার নতুন কোনো প্রকল্প নেই। ফলে শিগগিরই সংকট কাটবে না বলে মনে করছেন রেলের কর্মকর্তারা। ফলে নতুন ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে না। এখন নতুন কোনো পথে ট্রেন চালু করতে হলে অন্য কোনো পথে বন্ধ করে সেখান থেকে ইঞ্জিন নিয়ে আসতে হবে।
রেলে যে হারে বিনিয়োগ হয়েছে, সেবার মান ও যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা একেবারেই বাড়েনি। এর অর্থ, বিনিয়োগ সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। কাদের ভুল পরিকল্পনা ও দুর্নীতির কারণে রেল বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না, তা খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক
রেলওয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালে ২৭৩ বার চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগের বছর, ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ২০৩ বার। ২০২৪ সালের হিসাব এখনো তৈরি করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ বছরে চলতি পথে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনের সংখ্যা বেশি ছিল।
ইঞ্জিনের স্বল্পতা ও বিকল হওয়ার কারণে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইঞ্জিন–সংকটের কারণে মেইল ও লোকাল ট্রেনের যাত্রা যখন-তখন বাতিল করা হয়। রেলের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইঞ্জিন না পাওয়ার কারণে গত ডিসেম্বর মাসে শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলেই (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ১৯০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা। ইঞ্জিন বিকল ও স্বল্পতার কারণে গত নভেম্বরে পূর্বাঞ্চলে ১১৪টি ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে গড়ে এক ঘণ্টার বেশি করে সময় লাগিয়েছে।
কিছু কিছু পথে বাড়তি ট্রেনের চাহিদা আছে। কিন্তু রেলওয়ে সেখানে নতুন ট্রেন দিতে পারছে না। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারের পথে আরও পাঁচটি ট্রেন চালু করলেও যাত্রীর অভাব হবে না। কিন্তু ইঞ্জিন–সংকটের কারণে এই পথে ট্রেন বাড়ানো যাচ্ছে না।
রেলওয়েতে অপব্যয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বেশি ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে। ওই সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি মন্ত্রী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে বুলেট ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। কিন্তু ৯৬ হাজার কোটি টাকার খরচের প্রকল্পে কেউ অর্থায়ন করতে চায়নি।
নতুন ইঞ্জিনও বিকল হচ্ছে
রেলওয়ে সূত্র বলছে, রেলে ১৯৫৩ সালে কেনা কিছু পুরোনো ইঞ্জিন এখনো চলাচল করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় নতুন ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২০২১ সালে কেনা ৩০টি নতুন ইঞ্জিনও রয়েছে। ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা এসব ইঞ্জিন কেনা হয়। একেকটি ইঞ্জিনের দাম পড়েছে ৩৮ কোটি টাকা।
নতুন এসব ইঞ্জিনের অন্তত চারটি বিকল হয়ে কারখানায় পড়ে আছে।
নতুন ইঞ্জিনে সাধারণত বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কোরিয়া থেকে আনা ইঞ্জিনের বড় মেরামত দরকার হচ্ছে। যেমন রেলওয়ের ৩০১০ নম্বর ইঞ্জিনটি কোরিয়া থেকে আনা। গত নভেম্বরে এই ইঞ্জিনও ভারী মেরামতের জন্য ঢাকায় লোকোমোটিভ কারখানায় নেওয়া হয়। এখনো মেরামতকাজ চলছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ১৭ মে এসব ইঞ্জিন কিনতে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আসে ১০টি ইঞ্জিন। পরে আরেকটি প্রকল্পে ৮৪১ কোটি টাকায় আরও ২০টি ইঞ্জিন কেনা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, তিন হাজার হর্স পাওয়ারের (ক্ষমতা) ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে দুই হাজার হর্স পাওয়ারের। চুক্তিতে যে মডেলের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, দুটি মডেলের মধ্যে শক্তি উৎপাদনের সামর্থ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
চুক্তি অনুসারে ইঞ্জিন না আসায় সেগুলো প্রায় ছয় মাস ফেলে রাখা হয়। একাধিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তারপরও ইঞ্জিন গ্রহণ করা হয়। রেলওয়ে সূত্রের দাবি, তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের নির্দেশেই ইঞ্জিন গ্রহণ করা হয়েছিল।
‘দায় মুজিব ও সুজনের’
রেলওয়েতে অপব্যয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বেশি ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে। ওই সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি মন্ত্রী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে বুলেট ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। কিন্তু ৯৬ হাজার কোটি টাকার খরচের প্রকল্পে কেউ অর্থায়ন করতে চায়নি। কোনো সমীক্ষা ছাড়াই অন্য অঞ্চলের ট্রেন বন্ধ করে নিজ নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে পাঁচটি আন্তনগর ট্রেন চালু করেন নূরুল ইসলাম। ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে ২০০ কোটি টাকায় পুরোনো রেল ও কোচ সংস্কারের নামে অপচয়ের অভিযোগ উঠে তাঁর বিরুদ্ধে। করোনা মহামারির সময় চড়া দামে সুরক্ষাসামগ্রী ও সরঞ্জাম কেনা নিয়েও সমালোচনা হয়।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে রেলমন্ত্রী হিসেবে আরও দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও মুজিবুল হক। এর মধ্যে নূরুল ইসলাম ও মুজিবুল হকের আমলে ৯৩টি ট্রেন বন্ধ হয়েছে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী সাত বছরের বেশি সময় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মুজিবুল হক। তাঁর আমলেই বড় বড় রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া এবং বাস্তবায়িত হয়। এ সময়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বৃদ্ধির সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ৮৭৪ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে। মুজিবুল হকের আমলেই প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেললাইন স্থাপন প্রকল্প নেওয়া হয়। ২২ জোড়া ট্রেন চলার সক্ষমতা থাকলেও ইঞ্জিন ও লোকবলসংকটে এখন এই পথে মাত্র চার জোড়া ট্রেন চলে।
এর আগে প্রয়াত আবুল হোসেনের সময় ৬০০ কোটি টাকায় ডেমু ট্রেন আমদানির পর তা পাঁচ বছরও চলেনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে মুজিবুল হক আত্মগোপনে রয়েছেন। আর নূরুল ইসলাম কারাগারে। ফলে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিনিয়োগ, ভাড়া বাড়িয়ে লোকসান বেড়েছে
রেলওয়ের লোকসান বাড়ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রেলের বার্ষিক লোকসান ছিল ৬৯১ কোটি টাকা। এরপরই নতুন রেললাইন নির্মাণসহ নানা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে সরকার। বাড়ানো হয় ভাড়া। তারপরও তাতে বাড়তে থাকে লোকসান।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। লোকসান ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক টাকা আয় করতে রেল দুই টাকার মতো ব্যয় করছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলে যে হারে বিনিয়োগ হয়েছে, সেবার মান ও যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা একেবারেই বাড়েনি। এর অর্থ, বিনিয়োগ সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। কাদের ভুল পরিকল্পনা ও দুর্নীতির কারণে রেল বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না, তা খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।