রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার নৌবাহিনী সড়ক এবং আসামবস্তী সড়কে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। বিশেষ করে কাপ্তাই শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটি এবং জীবতলি সেনা বাহিনীর ৭ আর ই ব্যাটালিয়নের কারনে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারীর সংখ্যা বেশী হয়।
এছাড়া কাপ্তাই লেক প্যারাডাইস ও লেকশোর পিকনিক স্পট ঐ এলাকায় অবস্থানের কারনে এখানে প্রচুর পর্যটকরের আগমন ঘটে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে কাপ্তাইয়ের এই সড়ক সহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকাসহ লোকালয়ে বন্য হাতির উপদ্রব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
কাপ্তাই বন বিভাগের তথ্য মতে গত ২ বছরে কাপ্তাইয়ে বন্য হাতির আক্রমনে পর্যটক সহ ৮ জন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এইছাড়া বন্য হাতির পাল আক্রমন করছে মানুষের বাড়িঘরে। হাতির আক্রমণের কারণে ইতিমধ্যে বাড়িঘর এবং মানুষের ক্ষেত খামারের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বের অবসানে বনবিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কাপ্তাইয়ে শুরু হয়েছে “সোলার ফেন্সিং” নির্মাণ কাজ।
গত শুক্রবার কাপ্তাইয়ের নৌবাহিনী সড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায়, হাতি চলাচলের পথে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিক ও বনবিভাগের কর্মীরা। কাপ্তাই বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজ। যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোলার ফেন্সিং সিস্টেম সম্পর্কে আরও জানা যায়, এটি এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যা দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চেষ্টা করলে সোলার ফেন্সিং এর হালকা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে তারা ফিরে যাবে, তবে এতে হাতির প্রাণহানি ঘটবে না।
কাপ্তাইয়ে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আকাশ জানান, এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণে ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৮ শ’টি পিলার নির্মান করা হবে। এর প্রতিটি পিলার মাটির নিচে ৩ ফিট এবং উপরে ৭ফিটসহ মোট ১০ ফিট উচ্চতা হবে। বর্তমানে ৫০ টি পিলারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবং বাকী পিলার গুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, কাপ্তাইয়ের বন বিভাগের সিএমসির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল, কাপ্তাই শিল্প এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বাবু জানান, হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে এই সোলার ফেন্সিং এর পাশাপাশি বন্য হাতির বাসস্থান কিংবা খাবার সংকট দুর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, তাহলে সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে বন অদিদপ্তর কর্তৃক প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ভূমির উপর কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক স্থাপন করা হয়। এখানে সেগুন, গামারী, জারুল, মেহগনি সহ বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ রয়েছে। এছাড়া এখানে বুনো হাতি, হরিণ, বুনো বিড়ালসহ বিভিন্ন জাতের জীবজন্তু এবং নানা জাতের পাখির বিচরণ রয়েছে।