টেস্ট ক্যারিয়ার শেষের পথে কি না—এমন একটা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিলেন বিরাট কোহলি। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে সর্বশেষ ১০ ইনিংসে তাঁর রান ছিল ১৯২; ফিফটি করতে পেরেছিলেন মাত্র একটি।
তবে পার্থে প্রথম টেস্টে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে কোহলি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি; দলকে দেওয়ার মতো আরও কিছু বাকি। কিন্তু কোহলির সেই সেঞ্চুরি ছিল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে আউট হওয়ার আগে করতে পারেন মাত্র ৫ রান।
অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও ব্রিসবেনে চলমান তৃতীয় টেস্টেও একই দশা কোহলির। দুই ম্যাচেই ভারতের প্রথম ইনিংসে এই তারকা ব্যাটসম্যান আউট হন এক অঙ্কের ঘরে (৭ ও ৩)।
আসলে এ বছর প্রথম ইনিংস কোহলিকে বড্ড ভোগাচ্ছে। ঘরের মাঠ হোক কিংবা পরের মাঠ—ম্যাচের শুরুতে ব্যাট তাঁর হয়ে কথা বলছে না। ২০২৪ সালে টেস্টে ভারতের ইনিংসে কোহলির ব্যাটিং পরিসংখ্যান এতটাই খারাপ যে আরেকটু হলে একটা জায়গায় বিব্রতকর বিশ্ব রেকর্ড হতো।
তবে তাঁকে সেই রেকর্ড থেকে বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। আরেকটি অপ্রত্যাশিত পরিসংখ্যানে কোহলিকে পেছনে ফেলতে সহায়তা করেছেন বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন।
২০০৮ সালজুড়ে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ভুগেছেন মোহাম্মদ আশরাফুলছবি: এএফপি
২০২৪ সালে টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে এখন পর্যন্ত কোহলির ব্যাটিং গড় ১৩.২২। বছরে কমপক্ষে ৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন এবং ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ পাঁচে নেমেছেন—এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড় আশরাফুলের। ২০০৮ সালে ৯ ইনিংসে মাত্র ৯.৪৪ গড়ে ৮৫ রান করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক।
এক পঞ্জিকাবর্ষে এই অনুমাপকে শীর্ষ দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশিবার ডাকও মেরেছেন (শূন্য রানে আউট) আশরাফুল—তিনটি। চেতেশ্বর পূজারাও ২০২১ সালে ভারতের প্রথম ইনিংসে ১৪ বার ব্যাট করে ডাক মেরেছিলেন তিনবার।
অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে বাঁহাতি স্পিনারদের বলে কোহলির পারফরম্যান্স ভারতীয় সমর্থকদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে ১২ বার বাঁহাতি স্পিনে উইকেট দিয়ে ফিরেছেন কোহলি। এই সময়ে তাঁদের বিপক্ষে ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২০.৪১। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কোহলি পড়েছেন আরেক সমস্যায়। বলতে পারেন, পুরোনো রোগটাই আবার ফিরে এসেছে।
অফ স্টাম্পের বাইরে বারবার ‘ধরা খাচ্ছেন’ কোহলি; যেটাকে তাঁর ব্যাটিং–কৌশলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মনে হয়। ২০২১ সাল থেকে পেসারদের বিপক্ষে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কোহলির ব্যাটিং গড় ২৫.৮২। এই সময়ে অফ স্টাম্পের বাইরে ১০০০-এর বেশি বলের মুখোমুখি হয়েছেন ২৮ জন ব্যাটসম্যান। কোহলির চেয়ে কম ব্যাটিং গড় মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানের—বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন (২০.০০), ভারতের চেতেশ্বর পূজারা (২৩.২৬), নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলের (২৫.৪৭)।
এ বছর টেস্টে নিজের প্রথম ইনিংসে কমপক্ষে ১০০ রান করেছেন—এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড়ে কোহলির অবস্থান তিনে (১৩.২২)। এই পরিসংখ্যানের নিরিখে শীর্ষ পাঁচের তিনজনই নিউজিল্যান্ডের—টম ব্লান্ডেল, টিম সাউদি ও ম্যাট হেনরি। অন্যজন অস্ট্রেলিয়ায় মিচেল স্টার্ক।
কোহলিসহ পাঁচজনই ক্রিকেটের পরিচিত মুখ এবং তাঁদের ভূমিকাও সবার জানা। ব্লান্ডেল উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। আজ ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলে ফেলা সাউদি, তাঁর বোলিং–সঙ্গী হেনরি ও অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক পেসার। অর্থাৎ পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান বিবেচনায় নিলে ২০২৪ সালে প্রথম ইনিংসে কমপক্ষে ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোহলির ব্যাটিং গড়ই সর্বনিম্ন!
অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বিরাট কোহলির দুর্বলতা আবারও ফুটে উঠেছেছবি: এএফপি
এ বছর কোহলি আর একবার ভারতের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পাবেন। মেলবোর্নে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া বক্সিং ডে টেস্টে। সেই ম্যাচে নিজের প্রথম ইনিংসে ভারতকে দারুণ কিছু উপহার দিয়ে নিশ্চয় এসব বিব্রতকর পরিসংখ্যান থেকে বেরোতে চাইবেন কোহলি। পারবেন কি না, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।