অদ্যম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক তরুণ ৭বার বিজয়ী ইরানি বক্সারকে হারিয়ে বেক্সিমকো এক্সেল বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিয়েছে। শুরুর পথটা এমন ছিলো না কখনো, বান্দরবান সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে আলীকদম উপজেলা থেকে উঠা আসা এই তরুণ বক্সারের নাম ইমন তঞ্চঙ্গ্যা। তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর প্রথম পেশাদার বক্সার তিনি। পাহাড় থেকে উঠে আসা রাঙামাটির সুর কৃষ্ণ চাকমার পর পাহাড় থেকে আরেক পেশাদার বক্সার পেল বাংলাদেশ।
ইমনের বাড়ি জেলার আলীকদম উপজেলার ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড রোয়াম্ভূ বুলু কারবারি পাড়ার প্রদীপ তঞ্চঙ্গ্যা ও মাতা ননীমালা তঞ্চঙ্গ্যা’র দ্বিতীয় পুত্র সন্তান। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমন দ্বিতীয় সন্তান। তার বড় ভাই প্রণয় তঞ্চঙ্গ্যা, ও ছোট ভাই বিপিন তঞ্চঙ্গ্যা। বর্তমানে ইমন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্বপ্নবাজ এই তরুণ বক্সার পাহাড়বার্তা’কে জানায় সে গল্পের কথা। বড় ভাই ও কাকারা এক সময় পড়াশোনার জন্য বান্দরবান সদরে চলে যায়। পরবর্তীতে সেও ভর্তি হন বীর বাহাদুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বান্দরবানে আসার পর ইমন দেখলেন, বিকেল হলেই দাদা চলে যেতেন বান্দরবান স্টেডিয়ামে। সন্ধ্যায় ফেরার পর বাসায় ঝোলানো পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুসি ও ব্যায়াম করা দেখে খেলাধুলায় নতুন উৎসাহ জাগে ইমনের।
একদিন বড় ভাইয়ের কাছে আবদার করে তার সঙ্গে স্টেডিয়ামে যাওয়া। ইমন একটু অবাক হয়েই দেখলেন, ফুটবল কিংবা ক্রিকেট নয়, তার ভাই ব্যস্থ অন্যদের সঙ্গে ‘ঘুষাঘুষি’তে! পরে জানলেন, এই খেলার নাম বক্সিং। তখন তারও আগ্রহ হলো এই ‘ঘুষাঘুষির’ খেলায়। ছোট ভাইয়ের আগ্রহ দেখে পরে প্রণয় তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন বান্দরবান স্টেডিয়ামসংলগ্ন বক্সিং ক্লাবে। সেখানে বক্সিং কোচ আলেক রশিদ বাচ্চুর অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে লাগলেন ইমন। তখন থেকে টিভিতে বক্সিংয়ের কোনো অনুষ্ঠানই মিস করতেন না। বক্সিং হয়ে উঠল তার ধ্যানজ্ঞান।
ইমন আরো জানায়, ২০১৭ সালে বক্সিং ফেডারেশন আয়োজিত জুনিয়র ন্যাশনাল বক্সিং কম্পিটিশনের জন্য বান্দরবানের আটজনের দলে সুযোগ পেয়েছিলো সে। জেলা পর্যায়ে সেরা হয়ে তারা পরে বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামে খেলতে যান। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে পৌঁছান জাতীয় পর্যায়ে। ঐ বছরের মার্চে চূড়ান্ত পর্বের আসর বসেছিল বিকেএসপিতে। ৪৫ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হয়েছিলেন ইমন। তার লড়াইয়ের ধরন ভালো লেগে যায় বিকেএসপির বক্সিং কোচদের। এরপরে ২০১৮ সালে ইমন ভর্তি হয়ে যায় বিকেএসপিতে।
এরপর একে একে জুনিয়র ন্যাশনাল, বিকেএসপি কাপ, বিজয় দিবস কাপ জিতে যান। পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালে ২৫ মে জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও বাজিমাত করেন। বেক্সিমকো এক্সেল বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ (এক্সবিসি) ৩.০’। আন্তর্জাতিক প্রফেশনাল বক্সিং নাইটের এই আসর বসেছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সেখানে সুপার মিডল ওয়েট ক্যাটাগরিতে নাম লিখিয়েছিলেন ইমন তঞ্চঙ্গ্যা। তার প্রতিপক্ষ মাহদী সারভাজকে (ইরানের সাতবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন) পরাজিত করে বিজয়ী হন ইমন। ইমনের প্রিয় বক্সারের নাম “Canelo alvarez” তিনি মেক্সিকো বক্সার।
আলীকদম উপজেলার ক্রীড়াবিদ ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বিএসসি বলেন, ইমন আলীকদমের গর্ব, আলীকদমের ক্রীড়া অঙ্গনে তার এই অর্জন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জাগাবে।
আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন পাহাড়বার্তা’কে বলেন, ইমন শুধু আলীকদমের নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। তার এই অর্জন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে পরিচয় করিয়েছে। ইমন বাংলাদেশের সুনাম বহন করবে বলে আমি আশাবাদী।