একদিন পরেই পবিত্র রমজান মাস শেষে হবে ঈদ। আর তার সাথেই পহেলা বৈশাখ আর পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের সাংগ্রাইয়ের উৎসব উপলক্ষে কয়েকদিনের সরকারি ছুটি।
প্রতিবছর এমন ছুটিতে বান্দরবানের বিভিন্ন হোটেল মোটেল আর রির্সোটগুলো বুকিং হয় ১০০শতাংশ, তবে গত ২ এপ্রিল থেকে বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রারীরা ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে সারাদেশে। আর এমন পরিস্থিতি এবার বুকিং হয়নি বেশিরভাগ হোটেল আর যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বুকিং বাতিল করছে অনেকে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দীর্ঘ এই ছুটিতে পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বান্দরবানকে ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহের শেষ নেই। পাহাড় আর মেঘের মিতালি দেখতে হাজারো পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করেন জেলায়। দীর্ঘদিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও পরবর্তীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লম্বা সময় ধরে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা, ফলে দীর্ঘ সময় পর পর্যটন ব্যবসায় লাভের আশা করছিলেন তারা।
এদিকে সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সন্ত্রাসীরা রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে আবার নতুনভাবে। এমন পরিস্থিতি ঈদ, পহেলা বৈশাখ আর পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের সাংগ্রাই উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটিতে বান্দরবানে হোটেল মোটেলে বুকিং নেই আশানুরুপ পর্যটকদের।
বান্দরবান জেলা সদরের আবাসিক হোটেল হিলটনের ম্যানেজার আক্কাস জানান, এমন সময়ে প্রতিবছরই আমাদের বান্দরবানে হোটেলের রুম পাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে থাকতো। সারাদিন ফোন রিসিভ করে শুধু রুমের জন্য অনুরোধ করতো অনেক পর্যটক তবে এবার অবস্থা ভিন্ন। তিনি আরো জানান, এবার তেমন রুম বুকিং নেই,যা আছে তাদের মধ্যে অনেকেই আসবে কিনা সন্দেহ।
বান্দরবানের আবাসিক হোটেল আরণ্য এর মালিক মো.জসীম জানান, এবারের বন্ধে বান্দরবানে আমাদের হোটেল মাত্র ৪০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। আমরা অনেক লোকসানে পড়বে। তিনি আরো বলেন,সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমরা আতংকিত আর সেই সাথে পর্যটক আগমন খুব কম।
প্রতিটি বন্ধে বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক,চিম্বুক, দেবতাকুমসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণ করে পর্যটকরা হয় বিমোহিত, তবে এবার টানা সরকারি ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকদের সাড়া পাচ্ছেন না জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা।
বান্দরবান জীপ মাইক্রোবাস মালিক সময়বায় সমিতির লাইন পরিচালক মো.কামাল জানান, পর্যটকদের সেবার জন্য বান্দরবানে প্রায় ৪শতাধিক গাড়ী সার্বক্ষণিক প্রস্তুুত থাকে, তবে এবার সরকারি বন্ধ উপলক্ষে বুকিং কম, আশানুরুপ ব্যবসা হবে না।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো.সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানের দুর্গম উপজেলাতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বাড়লেও জেলা সদরে কোন আতংক নেই। জেলা সদরের পাশে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে আর পর্যটকরা চাইলে অনায়াসে সেখানে ভ্রমন করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি ছুটিতে আগত সকল পর্যটকদের জন্য আমরা আমাদের সকল হোটেল গুলো আধুনিকমানের করে সজ্জিত করার চেষ্টা করছি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।
এদিকে পর্যটন ব্যবসায়ীর নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছে,বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও বান্দরবান সম্প্রীতির জেলা, আর এই জেলাতে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে বড় ধরনের আতংকের কিছুই নেই। দীর্ঘ ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকরা অনায়াসে আসতে পারবে এবং ভ্রমন করতে পারবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, রুমা এবং থানচি ছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে এবং সেখানে ভ্রমন করতে আমরা পর্যটকদের উৎসাহিত করছি। বান্দরবানের দুর্গম যেকোন স্থানে ভ্রমনে পর্যটকদের জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।