মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। ফলে সড়কটির প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা।
দেশে এটাই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক। এর আগে কোনো সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি এত ব্যয় হয়নি।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরকে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সড়কটি ২৬ কিলোমিটার দুই লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্দরের কাছাকাছি বাকি অংশটুকু হবে চার লেন। সঙ্গে ছোট-বড় কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। করতে হবে জমি অধিগ্রহণ।
তারপরও সড়কটি নির্মাণে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক সেমিনারে সড়ক পরিবহন, রেলপথ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প তাঁকে অনুমোদন করতে হয়েছে। এর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৪৩৭ কোটি টাকা। এই সড়ক সোনা নাকি হীরা দিয়ে বাঁধানো হবে—এ প্রশ্ন রাখেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি এ বিষয়ে তিনি প্রকৌশলীদের আত্মোপলব্ধির অনুরোধ জানান।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর সংযোগ সড়কের কথাই বলেছেন। এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ না ধরলে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়ায় ৪৩৭ কোটি টাকা।
দেশে এত দিন সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক ছিল ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে। সওজের অধীনে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রায় ২০১ কোটি টাকা। এই ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৪৩৭ কোটি টাকা। এই সড়ক সোনা নাকি হীরা দিয়ে বাঁধানো হবে—এ প্রশ্ন রাখেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি এ বিষয়ে তিনি প্রকৌশলীদের আত্মোপলব্ধির অনুরোধ জানান।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটিতে নতুন কিছু কাজ যুক্ত করা হয়। তা শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেওয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প। এটির ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে মহাসড়কটি চার লেনের। দুই পাশে স্বল্প দূরত্বের স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়কও রয়েছে। সেখানে তিনটি বড় সেতু, কয়েকটি ছোট সেতুসহ বেশ কিছু আন্ডারপাস (পাতালপথ) নির্মাণ করা হয়েছে। করতে হয়েছে জমি অধিগ্রহণও।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ২৩৬ শতাংশ, অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের দামের কারণে ব্যয় বাড়তে পারে। তবে এতটা বেশি হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ২৩৬ শতাংশ, অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি।
জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ী বন্দর এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী সড়ক নির্মাণ হচ্ছে তিন ভাগে (প্যাকেজ)। এর মধ্যে দুটি ভাগের ঠিকাদার হিসেবে জাপানি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ভাগের ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান আছে।
সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নেওয়া মূল ঠিকাদারও জাপানের। নকশা প্রণয়ন পরামর্শকও সে দেশের। ঋণের কিছু কারিগরি শর্তের কারণে জাপান ছাড়া অন্য দেশের ঠিকাদারেরা সুবিধা করতে পারেন না।
সড়কটি নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২২ সালে। ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয় গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। সূত্র জানায়, বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি সামনে এলে মূল্যায়ন কমিটি আবার দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু জাইকা তাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত অর্থায়ন আটকে যাওয়া এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় উচ্চ ব্যয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যাচ্ছে সরকার।
২০২০ সালের মার্চে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। দুবার সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকার, গত বছরের অক্টোবরে।
মাতারবাড়ী বন্দর ও সংযোগ সড়ক প্রকল্প
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। জাপানের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জ্বালানি আমদানির জন্য প্রশস্ত চ্যানেল ও বন্দরের প্রয়োজন। আর বন্দরের সঙ্গে সংযোগের জন্য আসে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। বন্দর ও সড়ক প্রকল্পের আরও উদ্দেশ্য হচ্ছে—কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানো এবং ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো।
২০২০ সালের মার্চে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। দুবার সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকার, গত বছরের অক্টোবরে।
প্রকল্পটির দুটি অংশ। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের দায়িত্বে সওজ।
সওজের অংশের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুই লেনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত সড়ক ছাড়াও ১৪টি বিভিন্ন আকারের সেতু, একটি রেলওয়ে ওভারপাস ও ৪৫টি কালভার্ট নির্মাণ করার কথা রয়েছে। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এখন তা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য ৩৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি টাকায় ঠিকাদার
সংযোগ সড়ক নির্মাণে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে সিডব্লিউ-৩এ দুটি, সিডব্লিউ-৩বি তিনটি এবং সিডব্লিউ-৩সি–এর জন্য ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সব কটিতেই মূল ঠিকাদার জাপানের। সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের ঠিকাদারও অংশ নেন।
সওজ সূত্র জানায়, তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। কিন্তু জাপানি ঠিকাদারদের সম্মিলিত দর দাঁড়ায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। তিন প্যাকেজে গড়ে প্রাক্কলনের চেয়ে ব্যয় ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে দুটি অংশের সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দুই লেনের অ্যাকসেস কন্ট্রোল (প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত) সড়ক এবং বিভিন্ন আকারের ১০টি সেতু নির্মাণের ঠিকাদার হচ্ছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (যৌথ)। তারা দর প্রস্তাব করে ৭ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আরেকটি প্যাকেজে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক ও চারটি সেতু নির্মাণে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় জাপানের ওবাইশি করপোরেশন, টোয়া করপোরেশন ও জেএফই করপোরেশন (যৌথ)। তাদের দর ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা।
তিনটি প্যাকেজেই প্রাক্কলিত দরের চেয়ে উচ্চ মূল্য হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি আবার দরপত্র আহ্বান করার সুপারিশ করে। কিন্তু জাইকা এতে রাজি হয়নি। তারা বলেছে, শুধু ব্যয় কমানো বা নিম্ন দরদাতা নির্বাচনের জন্য আবার দরপত্র আহ্বান করা জাইকার ক্রয় নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; বরং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষির মাধ্যমে দর কমানোর পরামর্শ দেয় জাইকা।
জাইকার এই পরামর্শের পর শুধু একটি প্যাকেজে (সিডব্লিউ৩ এ) আবার দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি দুটিতে দর-কষাকষির সিদ্ধান্ত হয়। দর-কষাকষি শেষ, টোকিও কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে ব্যয় ৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকায় নামানো হয়। কমেছে ২৬৭ কোটি টাকা। যদিও তা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। শেষ পর্যন্ত বাড়তি দরেই তাদের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রকল্প এলাকার মাটি ভালো নয়। মাটি উন্নয়নে বাড়তি খরচ লাগবে। এ ছাড়া জাপানি পরামর্শক ও ঠিকাদারেরা নানা ঝুঁকি বিবেচনায় নেন। এ জন্য তাঁদের খরচ একটু বেশি।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান
বাড়তি মূল্যে ঠিকাদার নিয়োগের যৌক্তিকতা দেখাতে গিয়ে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়নের ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে। সওজের রেট শিডিউল (উপকরণের নির্ধারিত মূল্য) পরিবর্তন এবং বাজারদর পরিবর্তন হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি দুর্গম এলাকায় বলে ১০ শতাংশ বাড়তি খরচ যোগ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প এলাকার মাটি ভালো নয়। মাটি উন্নয়নে বাড়তি খরচ লাগবে। এ ছাড়া জাপানি পরামর্শক ও ঠিকাদারেরা নানা ঝুঁকি বিবেচনায় নেন। এ জন্য তাঁদের খরচ একটু বেশি। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণের প্রকল্পের শর্ত এবং প্রক্রিয়া সরকার ঠিক করে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে ব্যয় কমানোর সম্ভাব্য সব চেষ্টা তাঁরা করেছেন।
বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয়বহুল
সওজের অধীনে বর্তমানে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান আছে। এই মহাসড়কেও দুই পাশে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়ক রাখা হয়েছে। আছে বেশ কিছু উড়ালসড়ক ও সেতু। এই মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে এখন পর্যন্ত ব্যয় ১০০ কোটি টাকা।
সওজের অধীনে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত চার লেন নির্মাণ প্রকল্পও চলমান। এই মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১১৫ কোটি টাকা। এটিতেও স্থানীয় যানবাহনের জন্য আলাদা সড়ক রাখা হয়েছে। আছে অনেকগুলো উড়ালসড়ক ও সেতু।
অবশ্যই দরপত্রে প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। নতুবা প্রাক্কলনের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম-বেশি হলে আবার দরপত্র আহ্বান করাই উচিত। এটা স্বাভাবিক যে একটি দেশের ঋণ, ওই দেশের পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে বাংলাদেশের চেয়ে অর্থায়নকারী দেশের স্বার্থই বেশি দেখা হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ডিসেম্বরে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতি কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় সাড়ে ৬৩ লাখ ডলার। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় চীনে ৩৯, ভারতে সাড়ে ১৪ লাখ, পাকিস্তানে সাড়ে ২৯ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় সাড়ে ২১ লাখ, ফিলিপাইনে সাড়ে ১১ লাখ ও তুরস্কে ১৭ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অবশ্যই দরপত্রে প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। নতুবা প্রাক্কলনের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম-বেশি হলে আবার দরপত্র আহ্বান করাই উচিত। এটা স্বাভাবিক যে একটি দেশের ঋণ, ওই দেশের পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে বাংলাদেশের চেয়ে অর্থায়নকারী দেশের স্বার্থই বেশি দেখা হবে।
সামছুল হক বলেন, বাংলাদেশ টাকা ঋণ হিসেবে নিচ্ছে এবং তা সুদে-আসলে ফেরত দিতে হবে। এত বিপুল টাকা খরচ করে কী সুফল পাওয়া যাবে, তা ভালোভাবে মূল্যায়ন হওয়া উচিত।