চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীদের একটি দল। তারা ওই শিক্ষককে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক একটি কাগজে নিজের পদত্যাগপত্র লিখে সই করেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষকের নাম রন্টু দাশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
রন্টু দাশ এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদেও ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজ বিভাগে এসেছিলেন রন্টু দাশ। তখন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁকে অবরুদ্ধ করে ইতিহাস বিভাগের সভাপতির কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রন্টু দাশকে শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করছেন, এমন চিঠি লিখতে চাপ দেওয়া। এই চাপের মুখে রন্টু দাশ নিজের পদত্যাগপত্র লেখেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রন্টু দাশ ছাত্রলীগের পদে ছিলেন। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাবে শিক্ষক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র হত্যার ঘটনায়ও জড়িত ছিলেন। আবার পুলিশের করা একটি মামলায় জেলও খেটেছেন। তাঁরা রন্টু দাশের পদত্যাগ চান। আজ বিকেল পাঁচটায় এই দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি করবেন।’
জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা দেখায়, ওই শিক্ষক একটি মামলার ১ নম্বর আসামি এবং গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায়ও ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উনার বিতর্কিত ভূমিকা আছে বলেও শিক্ষার্থী দাবি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে। আমরা উপস্থিত হওয়ার আগেই ওই শিক্ষক একটা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখে টেবিলে রাখেন।’
প্রক্টর বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। ভবিষ্যতে এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষকদের পাশে থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা আলাদা কোনো পদ নয়। এটি পেশা। এখান থেকে কেউ পদত্যাগ করেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। কোনো শিক্ষক যদি এই পেশায় থাকতে না চান, তাহলে রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি চান। আবার কেউ যদি শিক্ষকতার বাইরে, প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষকসহ অন্য কোনো পদে থাকেন, তাহলে পদত্যাগ করেন। কিন্তু রন্টু দাশের চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
জানতে চেয়ে রন্টু দাশের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি এখন কথা বলার অবস্থায় নেই বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদত্যাগপত্রের ছবি পেয়েছেন। তবে মূল কাগজটি পাননি। মূল কাগজ পেলে আইন অনুযায়ী যা করণীয়, তাঁরা তা করবেন।