চালের দাম বাড়ছেই, সরকারি মজুত কমছে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 30-10-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে উদ্বেগজনক খবর হলো, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও ভারতসহ উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলেছে, চাল আমদানি বাড়াতে শুল্ক-কর পুরোপুরি তুলে নেওয়া দরকার।

চাল সরকারের জন্য একটি সংবেদনশীল পণ্য। গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে। চালের দাম এমন সময় বাড়ছে, যখন ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, ডিম, মুরগির মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া।

আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় প্রধান মৌসুম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশে চার কোটি টনের মতো চাল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে দেড় কোটি টনের মতো হয় আমনে। সপ্তাহ তিনেক পর থেকে আমন চাল বাজারে আসা শুরু করতে পারে।

 

 

দেশে কোনো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালে হাওরে আগাম বন্যায় বোরো মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন এক সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৭ থেকে ৯ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরও বলছে, তাদের গুদামে এখন চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমছে। যে হারে চাল বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী বছরের জুলাই নাগাদ প্রয়োজনের তুলনায় ১১ লাখ টন চালের ঘাটতি হতে পারে। নিরাপত্তা মজুত ও সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা দরকার। বেসরকারি খাতকেও চাল আমদানি বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার কারণে এবার চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। চালের মজুত বৃদ্ধির বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করছি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে।’

 

 

চালের বাজার পরিস্থিতি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেশি। এক মাসে বেড়েছে ২ শতাংশ পর্যন্ত।

টিসিবির হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি চাল ৫৮-৬৩ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা। সরু চালের সর্বনিম্ন দর ৮ টাকা বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে টিসিবি।

টিসিবি আরও বলছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে।

ঢাকায় চালের দুটি বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র বাবুবাজার-বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে চালের দাম বাড়তির দিকে। দুই বাজারের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন: এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিলমালিকেরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

বাদামতলীর শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চালের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমদানির বিকল্প নেই।

 

বিশ্ববাজার পরিস্থিতি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে।

কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।

ট্যারিফ কমিশনের মত হলো, এই দামে চাল আমদানি কঠিন। শুল্ক-কর তুলে নিতে হবে।

বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালের বাজার ঠিক রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার করা এখন জরুরি। চাল নিয়ে করা আমাদের প্রতিবেদনে এমন পরামর্শ উঠে এসেছে।’

সরকার ২০ অক্টোবর এক দফায় চালের শুল্ক-কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে। তবে এরপরও আমদানির ঋণপত্র বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক-কর কমানোর পর মাত্র ২৬ টন চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন এখন বাকি শুল্ক-করও তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। কমিশনের প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ফলে দাম ও সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর নীতি-পদক্ষেপ সম্প্রতি একবার নেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আবার নেব। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি, শিগগির কিছু হবে।’

শেয়ার করুন