কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বন্ধ হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের চেক জালিয়াতি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 19-10-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফল পেতে শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি অর্থবছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে দেশটির অর্থ বিভাগ বিপুল পরিমাণ তথ্য আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জালিয়াতি করা ১০০ কোটি ডলারের চেক উদ্ধার করতে পেরেছে।

সিএনএন জানিয়েছে, মেশিন লার্নিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আগের অর্থবছরের তিন ভাগের এক ভাগ অর্থের চেক উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। মার্কিন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা রেনাটা মিসকেল বলেন, এটা বড় রকমের পরিবর্তন। জালিয়াতি শনাক্ত ও তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে তথ্যের ব্যবহার সহায়তা করেছে।

জালিয়াতির বিভিন্ন ধরনের ঘটনা বন্ধে ২০২৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ সফল ছিল। এ সময় তারা যেসব জালিয়াতির ঘটনা বন্ধ ও অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছে, তার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৪০০ কোটি ডলারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। এক বছরে আগে এমন ঘটনা ছিল এর ছয় ভাগের এক ভাগ।

 

আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করতে মার্কিন কর্মকর্তারা ২০২২ সাল থেকে অনেকটা নীরবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা শুরু করেন। ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো অবশ্য অনেক আগে থেকেই এই কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আসছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে আর্থিক খাতে জালিয়াতি ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। কর দাতাদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ছিল এসব জালিয়াতির মূল উদ্দেশ্য। ওই সময় সরকার সাধারণ ভোক্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে নানা রকম সহায়তা দিয়েছিল।

অর্থ বিভাগ অবশ্য জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে না। ওপেনএআই কোম্পানির চ্যাটজিপিটি ও গুগলের জেমিনি এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবি তৈরি করছে, গান লিখছে আর জটিল সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে। বিপরীতে জালিয়াতি ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে মেশিন লার্নিং এআই। এর কাজ হলো তথ্য নিয়ে কাজ করা।

 

রেনাটা মিসকেল বলেন, জালিয়াতকারীরা তথ্য লুকাতে সিদ্ধহস্ত। তারা গোপনে সিস্টেমকে ব্যবহার করে জুয়াচুরির কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ওই গোপন বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে ও জালিয়াতি ঠেকাতে সাহায্য করে।

মার্কিন অর্থ বিভাগের জন্য এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে যারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্নভাবে পরিশোধ করে, এই বিভাগ তাদের মধ্যে অন্যতম। হয়তো সবচেয়ে বড়। প্রতিবছর তারা ১০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলার পরিশোধ করে। এমন পরিশোধের সংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। সামাজিক নিরাপত্তা ও চিকিৎসাসংক্রান্ত অর্থ দেওয়া থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের বেতন, কর প্রত্যাবর্তন ও প্রণোদনার অর্থ এই বিভাগ দিয়ে থাকে।

আর এসব কাজের কারণে স্বাভাবিকভাবেই জালিয়াতকারীরা অর্থ বিভাগকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। গত বছর ইন্টারন্যাল রেভেনিউ সার্ভিস ঘোষণা করে যে হেজ ফান্ড ও আইনি প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিষ্ঠান যেসব বড় বা জটিল রিটার্ন জমা দেয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে যে তাতে কোনো জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কি না।

অনলাইনে লেনদেনের ক্ষেত্রে জালিয়াতি ২০২৮ সাল নাগাদ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার পার হয়ে যাবে বলে মনে করছে জুনিপার রিসার্চ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জালিয়াতি করতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরে আরও আগের দিকে হংকংয়ে ঘটা একটি ঘটনা বেশ আলোচনা তৈরি করেছিল। সে সময় হংকং পুলিশ জানিয়েছিল, একটি ডিপফেক ভিডিও আর্থিক খাতের একজন কর্মীকে জালিয়াতদের কাছে আড়াই কোটি ডলার পাঠাতে প্ররোচিত করেছিল।

আর্থিক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন ঝুঁকি নিয়ে আসছে বলে এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। অর্থমস্ত্রী জেনেট ইয়েলেন গত জুনে ব্যাংকারদের সতর্ক করে বলেছিলেন, আর্থিক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি’ তৈরি করছে। গত বছর নিয়ন্ত্রক খাতের কর্মকর্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আর্থিক খাতের জন্য ‘উদীয়মান দুর্বলতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

শেয়ার করুন