কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার ওরফে নির্জনকে তিনজন ডাকাত মিলে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বারবার ছুরিকাঘাত করায় তাঁর ফুসফুসও ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরেও তিনি রক্ষা পাননি। গতকাল রোববার চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে এমন তথ্য উঠে আসে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে ডাকাতদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার (২৩)। এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল্লাহ আল হারুনুর রশিদ বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ হত্যা মামলা করেন। চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেন। মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পান চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ চার মাসের তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় এজাহারনামীয় ছয়জন আসামিকে বাদ দেন এবং নতুন করে সাতজনকে যুক্ত করে দুটি মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রে নাম আসা আসামিদের মধ্যে আবদুল করিম, আনোয়ারুল ইসলাম, মোর্শেদ আলম, শাহ আলম, আবু হানিফ ও মিনহাজ উদ্দিন এখনো পলাতক। বাকি আসামিরা গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন।
ডাকাত দলের সদস্যরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন অভিযানে আসা দলের সম্মুখসারির সদস্য লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার অগ্রসর হয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের দাঁড়ানোর জন্য বলেন এবং একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। অভিযান দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে এ সময় অস্ত্রধারী ডাকাতদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন, নুরুল আমিন, আবদুল করিম, মোর্শেদ আলম, নাছির উদ্দিন ও মিনহাজ উদ্দিন গুলি করতে করতে দৌড়ে যান। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার তাঁদের ধাওয়া করেন।
অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতি প্রস্তুতির গোপন সংবাদ পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে মেজর উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা যৌথ বাহিনী সদস্যদের দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন অভিযানে আসা দলের সম্মুখসারির সদস্য লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার অগ্রসর হয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের দাঁড়ানোর জন্য বলেন এবং একটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। অভিযান দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে এ সময় অস্ত্রধারী ডাকাতদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন, নুরুল আমিন, আবদুল করিম, মোর্শেদ আলম, নাছির উদ্দিন ও মিনহাজ উদ্দিন গুলি করতে করতে দৌড়ে যান। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার তাঁদের ধাওয়া করেন। কিছু দূর গিয়ে একটি বাড়ির উঠানের তারের বেড়ায় লেগে ডাকাত মোর্শেদ আলম পড়ে গেলে তাঁকে তানজিম ছারোয়ার ধরে ফেলেন।
এ সময় ডাকাত নুরুল আমিন, নাছির উদ্দিন ও পড়ে যাওয়া মোর্শেদ আলম সেনা কর্মকর্তা তানজিমের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। নুরুল আমিন, নাছির ও মোর্শেদ ছুরি দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করতে থাকেন। হত্যা নিশ্চিত করার জন্য গলার ডান পাশে গভীরে ছুরিটি প্রবেশ করিয়ে তানজিমের ফুসফুস পর্যন্ত ক্ষতবিক্ষত করেন ডাকাতেরা। গায়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক থাকলেও তিনজনের ছুরিকাঘাতে রক্ষা পাননি তানজিম। তখন ঘটনাস্থলের পাশ থেকে লোকজন ও অভিযানকারী দলের সদস্যদের আসতে দেখে মারাত্মক জখম অবস্থায় তানজিম ছারোয়ারকে ফেলে নুরুল আমিন, নাছির উদ্দিন ও মোর্শেদ আলম পশ্চিম দিকে বেড়া টপকে পালিয়ে যান। পাশেই থাকা ডাকাত দলের সদস্য হেলাল উদ্দিন, মিনহাজ উদ্দিন ও আবদুল করিম সুযোগ বুঝে উত্তর-পূর্ব দিকে দৌড়ে পালান। পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় তানজিম ছারোয়ারকে উদ্ধার করে প্রথমে মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রামু ক্যান্টনমেন্টের সিএমএইচে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাঁকে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ঘটনার অন্তত তিন–চার দিন আগে থেকে আসামি জালাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, আনোয়ার হাকিম, জিয়াবুল করিম, মো. ইসমাইল হোসেন, নুরুল আমিন, নাছির উদ্দিন, আবদুল করিম, মোহাম্মদ সাদেক, আনোয়ারুল ইসলাম, মোরশেদ আলম, শাহ আলম, আবু হানিফ, এনামুল হক, মো. এনাম, মো. কামাল ও মিনহাজ উদ্দিন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ডাকাতির প্রস্তুতি নিলে হানা দেয় যৌথ বাহিনী। এ সময় ডাকাতদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ার নিহত হন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আসামিদের কললিস্ট পর্যালোচনা, গ্রেপ্তার আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও গোপন তদন্তে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার হত্যাকাণ্ডে ১৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত তা গ্রহণ করে পলাতক ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি ১২ আসামি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।