বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মৎস্যঘেরের জমির বিরোধ নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে একটি সালিস বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু বৈঠক শুরু আগেই দুই পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মহিউদ্দিন মহারাজ (৫০) নামের এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মারামারিতে আরও অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন।
নিহত মহিউদ্দিন মহারাজ বরইতলা গ্রামের আবুবকর জোমাদ্দারের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মোরেলগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে থেকে আজ শনিবার সকালে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। মিজানুর রহমান সাবেক সেনাসদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ বিঘা জমির একটি চিংড়িঘের নিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মিজানুর রহমান ও কৃষক মহিউদ্দিন মহারাজের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। মিজানুর রহমানের ভাষ্য, তাঁর চাকরিজীবনের সঞ্চয় দিয়ে তিনি ওই জমি কিনেছেন। তবে তাঁদের আত্মীয় মহিউদ্দিন মহারাজ ওই জমি দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে মিজানুর থানায় অভিযোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে ওই পক্ষকে নিয়ে বসে কাগজপত্র দেখার জন্য বলেন। সে অনুযায়ী গতকাল উভয় পক্ষ মোরেলগঞ্জের লক্ষ্মীখালী পুলিশ ফাঁড়িতে আসেন। তাঁদের নিয়ে ফাঁড়ির তদন্ত কর্মকর্তা (আইসি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমানের বসার প্রস্তুতি চলছিল। তবে এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) পাওয়া একটি ফেনে এসআই সাইদুর রহমান দ্রুত বাইরে যান। তিনি ফিরে আসার আগে দুই পক্ষে ফাঁড়ির সামনে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
নিহত মহিউদ্দিনের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, মিজানুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর স্বামী মহিউদ্দিন মহারাজ, তাঁর বড় ভাই শওকত জোমাদ্দারসহ ৪-৫ জনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। আহত অবস্থায় মহিউদ্দিন মহারাজকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে সেখান থেকে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ৩টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
মোরেলগঞ্জ থানার ওসি মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ফাঁড়ির ইনচার্জ না থাকায় দুই পক্ষ নিজেরা মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে আহত মহিউদ্দিন মহারাজ পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মিজানুর রহমান নিজেও কিছুটা আহত হন। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে তাঁকে আটক করা হয়েছে।