‘এক ফোঁটা পানিও জমা ছিল না, এখন পড়েছি মহাবিপদে’
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 19-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

‘ঘরে এক ফোঁটা পানিও জমা ছিল না। গত সোমবার দুপুরের পর কলে আর পানি আসেনি। রান্না ও খাওয়ার পানির অভাবে মহাবিপদে পড়েছি। পানি ছাড়া কি এভাবে এক বেলাও চলা যায়?’

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকার পোড়া বস্তির বাসিন্দা রোজিনা বেগম পানি না পেয়ে এসব কথা বললেন। আজ বুধবার বেলা ২টায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিন দিন ধরে তাঁর ঘরে পানি নেই। চট্টগ্রাম নগরের কুয়াইশ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে গত সোমবার দুপুরে ফুটো হয়ে গেছে ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন। এর পর থেকেই পানির সংকটে পড়েছেন রোজিনা বেগম।

ত্রিশোর্ধ্ব রোজিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, পানির অভাবে বাসনকোসন ধোয়া হয়নি। জামাকাপড়ও পড়ে আছে। গোসলও করতে পারেননি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ও বিকেলে আধা মাইল হেঁটে ২০ লিটার খাওয়ার পানি এনেছিলেন। আজ সন্ধ্যায় আবার যাবেন।

 

 

চট্টগ্রাম নগরের অন্তত ৩০ এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা এখন রোজিনা বেগমের মতোই। পাইপ ফুটো হয়ে যাওয়ার কারণে ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ বন্ধ পড়ে আছে। এটি থেকে দিনে ১৪ কোটি লিটার পানি পাওয়া যেত। এখন এক লিটারও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে নগরজুড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মেরামত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান নেই।

ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে ২৮ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে আসে ৯ কোটি লিটার। এ ছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার। কর্ণফুলী নদীতে পানি কমে যাওয়ার ও শেওলা বাড়ার কারণে প্রায় এক মাস ধরেই পানির উৎপাদন কম হচ্ছিল। দিনে গড়ে ৫ কোটি লিটার পানি কম পাচ্ছিল সংস্থাটি। গতকাল উৎপাদন হয়েছে ৩২ কোটি লিটার।

 

‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের আওতায় কুয়াইশ এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছিল। ব্যবহৃত হচ্ছিল খননযন্ত্র। সেটির আঘাতে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের মূল সঞ্চালন পাইপ ফুটো হয়ে গেছে। এ কারণে রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত শোধনাগারটি থেকে কোনো পানি নগরে প্রবেশ করছে না।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাটি খনন করে পাইপটি মেরামত করতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। মেরামতের কাজে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

‘দূর থেকে পানি টেনে আনার কেউ নেই’

নগরের আগ্রাবাদের মাজারগেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন শারমিন বেগম। কয়েক দিন ধরে তিনি অসুস্থ। তাঁর স্বামী ইপিজেডে পোশাক কারখানায় কর্মরত। শারমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ পানি চলে যাওয়ায় তিনিও দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা পাশের একটি ভবনের গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেছেন। তিনি যেতে পারেননি। তাঁর স্বামীও অফিসে। এ কারণে দূর থেকে পানি টেনে আনার কেউ নেই।

হালিশহর নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা আফসানা বেগম জানান, দোকান থেকে ২০ লিটার পানি কিনে এনেছেন তিনি। তা দিয়ে কোনোমতে রান্না ও খাওয়ার কাজ চালাচ্ছেন।

যেসব এলাকায় পানি নেই

ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরের উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখান বাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনীয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকাননসহ অন্তত ৩০ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নগরে এমনিতেই পানির সংকট; সব এলাকায় ওয়াসার পানি পৌঁছায় না। কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর থেকে এক ফোঁটা পানিও মিলছে না। এ কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়ে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইপলাইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি মেরামত করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর আগে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না।’

 

শেয়ার করুন