খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যা: কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ, মাকে বলা হয়নি খুনের কথা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 25-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে (২৬) গুলি করে হত্যার ঘটনায় কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকেও কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে না। তবে কয়েকটি দিক সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রাতেই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোনো কিছু নিশ্চিত হতে না পেরে আটক ওই তিনজনের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা নগরের তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় অর্ণবকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে তেঁতুলতলা মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা এসে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি গুলি অর্ণবের মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

 

সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। জায়গাটি ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। উৎসুক মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছেন।

অর্ণবদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে। তাঁর বাবা নীতীশ চন্দ্র সরকার একজন ঠিকাদার। তাঁরা ১৫ বছর ধরে খুলনা নগরের বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় এলাকার করতোয়া লেনে বাড়ি করে বসবাস করছেন। ওই লেনের একেবারে শেষ বাড়িটি তাঁদের।

অর্ণবের লাশ আজ দুপুরে বাড়িতে পৌঁছায়। দুপুর ১২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাশ বাড়িতে নিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

ছেলের খুন হওয়ার কথা জানানো হয়নি অর্ণবের মাকে, তাঁকে বলা হয়েছে, অর্ণব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর আহাজারি থামছেই না। শনিবার দুপুরে খুলনা নগরের করতোয়া লেনের বাসায়

ছেলের খুন হওয়ার কথা জানানো হয়নি অর্ণবের মাকে, তাঁকে বলা হয়েছে, অর্ণব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর আহাজারি থামছেই না। শনিবার দুপুরে খুলনা নগরের করতোয়া লেনের বাসায়

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অর্ণবের শরীরে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তলের গুলি ও একটি শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ওসি বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অর্ণবের বাবা ঠিকাদার ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেই ব্যবসা দেখাশোনা করতেন অর্ণব। এটা নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীঘটিত কোনো ঘটনা বা অন্য কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না, সে ব্যাপারগুলো তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আজ বেলা একটার দিকে অর্ণবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাশ সৎকারের জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়িতে অর্ণবের মা দীপিকা সরকার আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। অর্ণবের পিসি (ফুফু) রুপা সরকার বলেন, ‘অর্ণবের মাকে এখনো অর্ণবের খুন হওয়ার কথা জানানো হয়নি। তাঁকে বলা হয়েছে, অর্ণব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে।’

অর্ণবের মা দীপিকা সরকার বারবার বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘বাবা তুই কেন মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলি!’ তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিল অর্ণব। কয়েকটি স্থানে ওর বাবার ঠিকাদারির কাজ চলছে। সেই কাজ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে জানতে পারি, অর্ণব মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।’

 

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারছবি: সংগৃহীত

অর্ণবরা দুই ভাই। বড় অর্ণব। ছোট ভাই অনিক কুমার সরকার এবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বড় ভাই মারা যাওয়ায় তাঁর আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি।

অর্ণবদের প্রতিবেশী মো. চুন্নু বলেন, অর্ণব খুবই ভদ্র ছেলে। এলাকায় কারও সঙ্গে তাঁকে কোনো খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়নি। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখতেন। হঠাৎ অর্ণবের খুন হওয়ার খবর শুনে এলাকার সবাই হতবাক হয়েছেন।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দিক মাথায় নিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের সবাই লাশের সৎকার নিয়ে ব্যস্ত আছেন। বিকেলের দিকে হয়তো তাঁরা মামলা করতে পারেন।


 

শেয়ার করুন