ইউএসএআইডি বন্ধে তৎপর ট্রাম্প–মাস্ক: ‘এটি আমাদের শত্রুদের জন্য উপহার’
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 05-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ক্ষমতায় বসার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করতে চাচ্ছে তাঁর নতুন প্রশাসন। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে না যাওয়ার জন্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউএসএআইডির মাধ্যমে বিশ্বে হাজার হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এই সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধী দল ডেমোক্রোটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা। তাঁদের মতে, এর ফলে বিভিন্ন দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতির মুখে পড়বে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমবে।

 

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর অন্যতম উপদেষ্টা ধনকুবের ইলন মাস্ক বরাবরই ইউএসএআইডির কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। গতকাল হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘কট্টর বামপন্থী উন্মাদেরা’ ইউএসএআইডি চালান। ‘ব্যাপক জালিয়াতি’ করেও সংস্থাটি পার পেয়ে যাচ্ছিল। তবে ওই ‘উন্মাদ’ কারা তা বিস্তারিত জানাননি ট্রাম্প।

ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির কার্যালয়ের বাইরে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে এক ব্যক্তি

ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির কার্যালয়ের বাইরে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে এক ব্যক্তিছবি: রয়টার্স

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংস্থাটিতে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু ইউএসএআইডির জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এখন থেকে ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেব দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এল সালভেদরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংস্থাটির অনেক কার্যক্রম চালু থাকবে। তবে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই পরিবর্তন বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে প্রশাসন পরিকল্পনা করছে, তা স্পষ্ট নয়।

 

ইউএসএআইডি নিয়ে ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরই মার্কো রুবিও এসব কথা বলেন। মার্কিন সরকারের ব্যয় কমানো–সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাস্ক। তিনি বলেন, ইউএসএআইডি বন্ধের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড় সপ্তাহান্তে ইউএসএআইডির শীর্ষ দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটও এখন বন্ধ।

ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত আইনবিরোধী এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্রেটিক দলের আইনপ্রণেতারা।

বিবিসির হাতে আসা অভ্যন্তরীণ এক বার্তা অনুযায়ী, গতাকাল ইউএসএআইডির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। সংস্থাটির শত শত কর্মচারীদের ই–মেইলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেন

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করেনছবি: রয়টার্স

‘এটি একেবারেই অবৈধ’

ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত আইনবিরোধী এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্রেটিক দলের আইনপ্রণেতারা। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেছেন, ‘এটি (সিদ্ধান্ত) শুধু আমাদের শত্রুদের জন্য একটি উপহারই নয়...এটি একেবারেই অবৈধ।’

সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রভাবসংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন সামনে এনেছেন মেরিল্যান্ডের কংগ্রেস সদস্য জনি ওলজিউস্কি। ওই প্রতিবেদনগুলোতেও উঠে এসেছে যে এর আগে সহায়তা বন্ধের পর সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোদ্ধাদের বন্দী করে রাখা কারাগারের রক্ষীরা প্রায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওলজিউস্কি বলেন, ‘এটা বাস্তবতা, এটা বিপজ্জনক, এটা মারাত্মক।’

অন্যদের ভাষ্যমতে, ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিতের পেছনে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করেন ইলন মাস্ক। আর আজকের এই পদক্ষেপের (সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত) পর চীন উল্লাস করছে।’

ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) নামে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি বিভাগ খুলেছেন। ওই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাস্ক। এটি সরকারের কোনো সংস্থা নয়। তবে সরকারি ব্যয় কাটছাঁট করার জন্য তাদের বিস্তৃত স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বিভাগটি আইনিভাবে কতটা বৈধ, তা স্পষ্ট নয়। সরকারি কোনো প্রকল্প বন্ধের ক্ষমতা তাদের আছে কি না, সেটিও বোঝা যাচ্ছে না। এই বিভাগটি এরই মধ্যে আদালতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইট বন্ধ থাকার কারণে অনেক তথ্যেই প্রবেশ করা যাচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্ভিক্ষের তথ্য এবং দশকের পর দশক ধরে দেওয়া সহায়তার তথ্যও উধাও হয়ে গেছে।

সপ্তাহান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক ডজন বার্তা দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এসব বার্তায় ইউএসএআইডি জালিয়াতি ও দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গত সোমবার মাস্ক লিখেছেন, ‘এটি (ইউএসআইডি) সংস্কারের বাইরে চলে গেছে...আমরা এটিকে বন্ধ করছি।’

 

ইউএসএআইডি যুক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে

 

বিভিন্ন দেশের বেসরকারি সংস্থা, অলাভজনক সংস্থা ও দাতা গোষ্ঠীগুলোকে শত শত কোটি ডলার সহয়তা দিয়ে থাকে ইউএসএআইডি। সংস্থাটির ওয়েবসাইট বন্ধ থাকার কারণে অনেক তথ্যেই প্রবেশ করা যাচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্ভিক্ষের তথ্য এবং দশকের পর দশক ধরে দেওয়া সহায়তার তথ্যও উধাও হয়ে গেছে।

ওয়াশিংটনে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইউএসএআইডির কার্যালয়

ওয়াশিংটনে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইউএসএআইডির কার্যালয়ছবি: রয়টার্স

এদিকে ইলন মাস্কের বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে বিগত কয়েক দিনে ইউএসএআইডির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই দ্বন্দ্বের একটি কারণ হলো মাস্কের বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তাদের কর্মকর্তাদের যেন ইউএসএআইডির উচ্চ নিরাপত্তায় ঘেরা একটি এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। সংস্থাটির গোপনীয় তথ্য পর্যালোচনা করা হয় ওই এলাকায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে, দ্বন্দ্বের মধ্যে ইউএসএআইডির নিরাপত্তাবিষয়ক পরিচালক জন ভোরহেস এবং উপরিচালক ব্রায়ান ম্যাকগিলকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আর ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, সংস্থাটির প্রধান কর্মকর্তা ম্যাট হপসনও চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

শেয়ার করুন