গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে হামাসের হাতে বন্দী ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে কাতার। দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় মূল মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম।
দীর্ঘ ১৫ মাস পর গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এ চুক্তির লক্ষ্য গাজাযুদ্ধের অবসান।
চুক্তির আওতায় গাজা থেকে জিম্মিমুক্তি দেওয়া হবে, কাতার এ খবর দেওয়ার আগের দিন গত মঙ্গলবার ইসরায়েল বলেছে, তারা চুক্তির প্রথম ধাপে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেবে।
কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরের বরাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে কী কী হতে পারে, তা তুলে ধরা হলো—
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল-থানি গতকাল বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে, অর্থাৎ প্রথম ৪২ দিনে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এটিকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পরিণত করা হবে বলেও জানান তিনি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বেসামরিক নারী এবং নারী সেনা, শিশু, বয়স্ক ও বেসামরিক লোকজন যাঁরা অসুস্থ ও আহত, তাঁদের প্রথমে মুক্তি দেওয়া হবে।’
ফিলিস্তিনি কারাবন্দী মুক্তির বিষয়ে মঙ্গলবার ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেছিলেন, ‘৩৩ জিম্মির বিনিময়ে কয়েক শ (ফিলিস্তিনি বন্দী)...বড় মূল্য চোকাতে প্রস্তুত আছে ইসরায়েল।’
নাম প্রকাশ না করে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘জিম্মিদের বিনিময়ে কয়েক শ ‘‘সন্ত্রাসীকে’’ মুক্তি দেওয়া হবে। যদিও ওই ৩৩ জন জিম্মির কতজন জীবিত আছেন, সেটার ওপর চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ভর করছে।’
যুদ্ধবিরতির খবরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছ্বাস। বুধবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসেছবি: এএফপি
এদিকে হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, ইসরায়েল প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। এ দলে দীর্ঘ কয়েক বছর কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরাও থাকবেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথম ধাপের ৪২ দিনে চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি ইসরায়েলের। এ ছাড়া দেশটি থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৪১ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো বন্দী। জিম্মিদের মধ্যে ৩৪ জনকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মৃত বলে ঘোষণা করেছে।
টাইমস অব ইসরায়েল বলেছে, ৩৩ জন জিম্মি জীবিত আছেন বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিশ্বাস।
হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন নিহত হয়েছেন।
চুক্তির প্রথম ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তবে সেনারা গাজার ভেতরই সীমান্তের কাছে অবস্থান করবেন এবং বন্দিবিনিময় ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিরে আসার কাজে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলোচনা শুরু হবে।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। সে সময় নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ ফেরত আনার ব্যবস্থাও করা হবে।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রথম ধাপে গাজায় একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল (বাফার জোন) তৈরি করবে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে তেল আবিবে জিম্মিদের স্বজনেরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনছবি: রয়টার্স
হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণে রাফা সীমান্ত থেকে উত্তরের বেইত হানুন পর্যন্ত গাজার ৮০০ মিটার ভেতরে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, অবশিষ্ট সব জিম্মি ফিরে না আসা পর্যন্ত গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে না।
হারেৎজ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণ থেকে বাসিন্দাদের উত্তরে ফিরে আসার সুযোগ দেবে ইসরায়েল।
হামাসঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীকে নেৎজারিম করিডর থেকে পশ্চিমে সালাহেদ্দিন রোড ধরে পূর্ব দিকে সরিয়ে নেওয়া হবে। ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষ ক্যামেরাযুক্ত একটি ইলেকট্রনিক তল্লাশিচৌকির মাধ্যমে নিজেদের জায়গায় ফিরে আসতে পারবেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের একটি প্রতিনিধি পর্ষদ কায়রোয় অবস্থান করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার ওপর নজরদারি করবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগপর্যন্ত গাজায় সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর প্রকাশ করার সময় বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এটাই যুদ্ধের শেষ অধ্যায় হবে। আমরা এ-ও আশা করছি, সব পক্ষ চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে।’ চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।