ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু মুচকুন্দ দুবে আর নেই। আজ বুধবার দিল্লির ফোরটিস এসকোর্টস হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৯০ বছর বয়সী মুচকুন্দ দুবে মাসখানেক ধরে অসুস্থ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
মুচকুন্দ দুবের জন্ম ভারতের বিহার রাজ্যের দেওঘরের জিসিডিতে, ৩ নভেম্বর ১৯৩৩ সালে। এই জিসিডি এখন নতুন গঠিত ঝাড়খন্ড রাজ্যের অন্তর্গত। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর এক বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি অক্সফোর্ড ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি–লিট ডিগ্রি পান তিনি।
মুচকুন্দ দুবে ১৯৫৭ সালে যোগ দেন ভারতীয় পররাষ্ট্র বিভাগে; কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তেহরান, জেনেভা, বার্ন, নিউইয়র্ক ও ঢাকায়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত ছিলেন জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি। ১৯৯১ সালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। পরে তিনি দিল্লির কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
১৯৫৮ সালের ২৮ মে বাসন্তী মিশ্রর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মুচকুন্দ দুবে যখন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন, সে সময়ে বাসন্তী দুবে প্রায় তিন বছর বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী ও প্রশিক্ষক সোহরাব হোসেনের কাছে নজরুলসংগীত শেখেন। এই দম্পতির দুই কন্যা। মধুমতী দুবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইউনিভার্সিটির ইংরেজির অধ্যাপক এবং মেধা দুবে দিল্লিতে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত।
বিশ্ব অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও নিরস্ত্রীকরণ, উন্নয়ন সহযোগিতা, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা এবং ভারতের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে গবেষণা করেন মুচকুন্দ দুবে। এসব বিষয়ে তাঁর লেখা, সম্পাদনা করা অনেক বই ও নিবন্ধ রয়েছে।
মুচকুন্দ দুবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি নিয়মিত মতামত দিতেন। প্রথম আলোতে তাঁর একাধিক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি।
মুচকুন্দ দুবে লালনভক্ত ছিলেন। লালনের অনেক গান তিনি হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন। বই আকারেও সেই অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।