ইউক্রেন হারলে ‘স্বৈরাচারী জোট’ শক্তিশালী হবে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 04-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার আগেই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্যারিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছিলেন। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টা সঠিক। 

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বাড়িয়েছে এবং তাদের রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার বিষয়টিকে অনুমোদন দিয়েছে। তারপরও ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলে ভূমি হারাচ্ছে এবং তার পুরো ভূখণ্ডে ভয়ানক বিমান হামলার শিকার হচ্ছে। 

রাশিয়া এই হামলার মাধ্যমে হয়তো ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে না; কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধ ইউক্রেনকে শেষ পর্যন্ত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে। 

 

তবে ট্রাম্পের এটি বুঝতে হবে, ইউক্রেনকে সাহায্য দেওয়া চালিয়ে যাওয়া তার নিজের রাজনৈতিক লাভের জন্য এবং আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার জন্যও জরুরি। 

রিপাবলিকান পার্টির উচিত ট্রাম্পকে সহায়তা বন্ধ না করার পরামর্শ দেওয়া। কারণ, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখলে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। অন্যথায়, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু আমেরিকার স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং তা বিশ্বনেতা হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তিও নষ্ট করবে। 

পুতিনের যদি মনে হয় আমেরিকা আর ইউক্রেনকে সহায়তা দিচ্ছে না, তাহলে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। যদি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে এবং রাশিয়া আরও এলাকা দখল করে কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। এটি আফগানিস্তানের মতো আরেকটি বিপর্যয়ে পরিণত হবে। 

আর যদি পুতিন জানেন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দীর্ঘ সময় ধরে সাহায্য দেওয়া চালিয়ে যাবে, তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন, এই যুদ্ধে জেতা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। সে অবস্থায় যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে তাঁর আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। 

 

ইউক্রেনকে একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করার মতো একটি চুক্তি করা সম্ভবত ট্রাম্পের ধারণার চেয়েও বেশি কঠিন হতে পারে। যুদ্ধের পর ভূখণ্ড ভাগ করা তুলনামূলক সহজ কাজ। কারণ যুদ্ধবিরতির সময় যে বাহিনী যেখানে অবস্থান করবে, সেই ভিত্তিতেই ঠিক হবে কোন ভূখণ্ড কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

ইউক্রেনকে সাহায্য চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যুদ্ধবিরতি ইউক্রেন এবং পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষা করে। ট্রাম্পের এমন কোনো চুক্তি করা ঠিক হবে না, যা ইউক্রেনকে চিরস্থায়ীভাবে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার করে ফেলে। 

একটি দখলকৃত ইউক্রেন শুধু রাশিয়ার জন্য নয়, এটি চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার জন্যও বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, এই দেশগুলো রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনকে সমর্থন করছে এবং এই যুদ্ধ একটি ‘স্বৈরাচারী জোটের’ প্রথম সম্মিলিত উদ্যোগকে উপস্থাপন করছে। 

যদি ট্রাম্প ইউক্রেনকে হারান, তাহলে তা আমেরিকার শত্রুদের আরও সাহসী করবে এবং মার্কিন শক্তি ও এর মিত্রদের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে। ইউক্রেনের জন্য একটি খারাপ চুক্তি ট্রাম্পের জন্যও খারাপ চুক্তি হিসেবে ধরা দেবে। ট্রাম্পের উচিত এমন একটি চুক্তি মেনে নেওয়া, যা নিশ্চিত করবে ইউক্রেনের সরকার বর্তমানে যে ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটি স্বাধীন, নিরাপদ এবং সফল একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। 

ইউক্রেনকে একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করার মতো একটি চুক্তি করা সম্ভবত ট্রাম্পের ধারণার চেয়েও বেশি কঠিন হতে পারে। যুদ্ধের পর ভূখণ্ড ভাগ করা তুলনামূলক সহজ কাজ। কারণ যুদ্ধবিরতির সময় যে বাহিনী যেখানে অবস্থান করবে, সেই ভিত্তিতেই ঠিক হবে কোন ভূখণ্ড কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

পুতিন হয়তো দাবি করতে পারেন, রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনের অংশগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিক এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। এই শর্তও ট্রাম্প কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেন না। 

ট্রাম্প এ ধরনের দাবি মেনে নিলে তা রাশিয়ার দ্বারা অন্য একটি দেশের ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখলকে বৈধতা দেওয়া হবে। পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের আগের মতো আবারও ইউরোপের নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং ন্যাটোর পূর্বাঞ্চল থেকে মিত্র বাহিনী কমানোর দাবি জানাতে পারেন। তবে ট্রাম্পকে এ ক্ষেত্রে দৃঢ় থাকতে হবে। কারণ, রাশিয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা দুর্বল করার সুযোগ নেই। 

মোটকথা, ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা সঠিক হলেও ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত না করে কোনো চুক্তি করলে তা হবে কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের জন্য ক্ষতিকর। 

মাইকেল ফ্রোম্যান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রেসিডেন্ট। চার্লস এ কাপচান জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

শেয়ার করুন