যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি শহরতলিতে গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ রকমের দাবানল ছড়িয়েছে। এতে সেখানকার বিভিন্ন ভবন পুড়ে গেছে।
ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়াতে শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ছোটাছুটি শুরু করেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবানলকে কেন্দ্র করে লস অ্যাঞ্জেলেসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকা পার্বত্য এলাকার ১ হাজার ২৬০ একর জায়গাজুড়ে দাবানল ছড়িয়েছে। ওই এলাকায় দামি দামি বাড়িঘর আছে। দাবানল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে আতঙ্কিত বাসিন্দারা প্যাসিফিক প্যালিসেডস পার্বত্য এলাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটির মধ্যে তাঁদের গাড়ি ফেলে রেখে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হেঁটেই রওনা করেন।
এমন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে গাড়িগুলোকে সরাতে বুলডোজার ব্যবহার করেন। বুলডোজার দিয়ে বেশ কিছু গাড়িকে ঠেলে রাস্তার এক পাশে নিয়ে যান তাঁরা। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ, টেসলা ও মার্সিডিজের দামি মডেলের গাড়িও আছে। এ সময় অনেকগুলো গাড়ি ভেঙে যায় এবং এগুলোর অ্যালার্ম বাজতে থাকে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিস বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি বলেছেন, নিরাপদে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে হুড়োহুড়ি হলেও দাবানলের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মৃত্যু বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের শত শত কর্মী কাজ করছেন। কেউ স্থলভাগ থেকে, আবার কেউ উড়োজাহাজ থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
দাবানলে ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাড়িঘর পুড়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্রছবি: রয়টার্স
দাবানল দ্রুত ছড়াতে থাকায় এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দাবানলে বেশ কিছু ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারন গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিপদমুক্ত নই।’ বাতাসের গতি আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইতিমধ্যে দাবানল–সম্পর্কিত তথ্য জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য বাইডেনের দল স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
গতকাল সকালের দিকে ওই দাবানল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে স্থানীয় লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়েন।
দাবানল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে গ্যারি নামের এক ব্যক্তি সম্প্রচারমাধ্যম কেটিএলএকে বলেন, সি রিজ নামে যে এলাকায় তিনি থাকেন, সেখানে গরম ছাইগুলো যেন বৃষ্টির মতো ঝরছিল।
গ্যারি আরও বলেন, ‘দূরে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এটা পাহাড়ের ওপর পর্যন্ত আসবে না...পাঁচ মিনিট পরে এটি পাহাড়ের দিকে আসতে থাকে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ল; তখনই সবাই দৌড়ে গিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করল।’
কেলসি ট্রেইনর নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তিনি তাঁর বাড়ি থেকে পালানোর সময় আগুনের গোলা বিস্ফোরিত হতে দেখেছেন।
কেলসি বলেন, ‘যখন আমরা দু–তিন মাইল দূরত্বে পাহাড়ের নিচে পৌঁছালাম, তখন রাস্তার দুই পাশে আগুন ছিল এবং সেখানে জটলা লেগে গিয়েছিল। কী করতে হবে, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। সবাই তাদের গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছিল। চারপাশে আগুন জ্বলছিল।’
কেইলি ট্রেইনরের বর্ণনা অনুযায়ী, লোকজন স্যুটকেস নিয়ে হাঁটছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বাচ্চাকাচ্চা ছিল, কুকুর ছিল। এক বয়স্ক নারীকে বিচলিত হয়ে কান্না করতেও দেখেছেন তিনি।
প্যাসিফিক প্যালিসাডেসের বাসিন্দা অ্যান্ড্রু হায়ারেস এএফপিকে বলেছেন, তিনি তাঁর সন্তানের দাঁত তোলার জন্য দন্তচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বসেই তিনি দাবানলের বিষয়ে সতর্কতামূলক একটি খুদে বার্তা পান। আর তা জানতে পারার পর দ্রুত তাঁরা গাড়িতে ওঠেন।
এমন সময়ে ওই অঞ্চলে দাবানল শুরু হলো, যখন কিনা সেখানে মৌসুমি সান্তা আনা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদেরা আভাস দিয়েছেন, এটা ভয়াবহ ঝোড়ো বাতাসে রূপ নিতে পারে, যা এক দশকের মধ্যে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের আভাসে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির কিছু অংশে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) বেগে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুরুতর দাবানলের বিপদজনিত সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা বহাল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।