খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত একটি গ্রামের নাম থানাচন্দ্র পাড়া। উপজেলার ২নং কমলছড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গম এই গ্রামের অবস্থান। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এই গ্রামে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। গ্রামে রয়েছে শুষ্ক মৌসুমে যথেষ্ট সুপেয় পানির অভাব। গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরটিও পায়নি গ্রামের কেউ। স্থানীয়দের দাবি, বারবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে এই গ্রামে বসবাস করে আসছে মানুষ। গ্রামে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১০৫। এই গ্রামে অন্তত ৫শ জনের অধিক মানুষের বসবাস। অথচ গ্রামে নেই বিদ্যুৎ ও পর্যাপ্ত পানির সুবিধা। গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন কয়েকটি পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বেশির ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ ঘর বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি। পানির জন্য ঘরের আশপাশে নেই কোনো নলকূপ। কয়েকটি ঘরে সোলার প্যানেল থাকলেও নেই পানির কোনো উৎস, পানির উৎস থাকলেও পর্যাপ্ত নয়।
স্থানীয় যুব প্রতিনিধি প্রিয় মোহন ত্রিপুরা জানান, এই গ্রামে এখনো বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। অবস্থাসম্পন্ন কয়েকটি পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বিদ্যুতের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুতের সংযোগ পেলে তাদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে বলে জানান তিনি।
গ্রামের বাসিন্দা মতিকা ত্রিপুরা (৩৫) জানান, দৈনন্দিন কাজের মাঝে পানি সংগ্রহ তার প্রধান কাজ। পানি না থাকলে ঘরের অন্য কাজগুলো করা যায় না। গ্রামে পানির কোনো উৎস নেই। প্রায় এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দৈনিক দুই-তিনবার পানি সংগ্রহের জন্য আসতে হয় বলে জানান তিনি।
পাড়ার রাধাকৃষ্ণ মন্দির কমিটির সভাপতি লালন কুমার ত্রিপুরা জানান, এই গ্রামে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি। পানি ও বিদ্যুতের অভাব মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এছাড়াও আমাদের পাড়ায় ২০০৭সালে পাড়াবাসীর উদ্যোগে নির্মিত ‘শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির’’ এবং দূর্গা বাড়ী মন্দির নির্মাণের জন্যও সহযোগিতা পায়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে একাধিকবার আবেদন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, `স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের দুর্ভোগ নিয়ে উদাসীন। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও জয়ী হওয়ার পরে তা ভুলে যান।'
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার উহলাপ্রু মগ জানান, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৮০ভাগই গরিব ও অসহায়। এ ব্যাপারে আমি কি আর বলবো। সরকারি বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একটু নজর দেয় তাহলে গ্রামবাসী উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমা জানান, পুরো কমলছড়ি ইউনিয়নের মানুষ গরিব ও অসহায়। তারমধ্যে থানাচন্দ্র পাড়া একটি। গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকা বিধায় বিদ্যুতের সংযোগ এবং সুপেয় পানির সুবিধা দিতে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। মাননীয় এমপি মহোদয়কেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে খুব দ্রুত সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর একটাও পায়নি কেন? এমন জবাবে চেয়ারম্যান জানান, ঘরের বিষয়ে ইউএনও মহোদয় ১০টি ঘরের তালিকা দিতে বললে, তালিকা দিয়েছি। ইউএনও মহোদয়ও ইউনিয়নে প্রায় ৬০/৬৫টি ঘর পরিদর্শন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, `বিদ্যুৎ ছাড়া এই গ্রামের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলায় শতভাগ বৈদ্যুতিক সুবিধা দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।' এমনকি থানাচন্দ্র পাড়াসহ ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রামের তালিকা পাঠিয়েছি।