নড়াইলের লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের প্রচারের ঘটনায় পুলিশ ওই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি হয়নি। তবে পুলিশ ওই তিন কর্মচারীকে পাঁচ মাস আগের ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ছাত্রলীগের বিষয়ে লেখা প্রচারের বিষয়ে কলেজের ওই তিনকর্মী জড়িত নন; তাঁরা নিরাপরাধ। ওই ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে কলেজ থেকে ওই তিনজনকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। পরে পাঁচ মাস আগে দায়ের হওয়া মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এমনকি আদালতে দাখিল করা পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তিনজনকে লোহাগড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন কলেজের কম্পিউটার অপারেটর মাহাবুর রহমান (৩৮) ও পরান কাজী (২৮) এবং নৌশপ্রহরী এস এম আরিফুজ্জামান (৪৮)। তাঁরা সরকারি কর্মচারী নন; কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের মাস্টাররোলে নিয়োগ করেছিল। পরান কাজী তিন বছর, অন্য দুজন এক দশকের বেশি সময় কলেজে চাকরি করছেন।
ওই তিনজনকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেটি লোহাগড়া থানায় দায়ের হয়েছিল গত বছর ১৩ নভেম্বর (মামলা নম্বর ১৫)। এতে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৩৫ জনকে; অজ্ঞাতনামা আসামি ৫০-৬০ জন। ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে ৫ জানুযারি উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোকজন। লোহাগড়া বাজার থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা বিএনপিদলীয় লোকদের ভয়ভীতি দেখাতে ও ৪ আগস্ট বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অবস্থান কর্মসূচি ভঙ্গ করে। আশপাশের দোকান ভাঙচুর করে। ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে ওই প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে এসআই আসাদুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনিয়র স্যারদের নির্দেশনায় ওই মামলায় তাঁদের ঢুকানো হয়েছে। আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে সচরাচর যা গৎবাঁধা কথা লিখতে হয়, তা–ই লিখেছি। যা লিখেছি, তা সঠিক নয়।’
৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের ছয়তলা ভবনের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ছাত্রলীগ নিয়ে একটি লেখা ভেসে ওঠে। সেখানে লেখা ছিল, ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা আবার আসবে বীরের বেশে।’ এ বিষয়ে
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুননাহার বলেন, ‘কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার সময় কলেজের ছয়তলা ভবন থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অল্প বয়সী তিনটি ছেলে; কিন্তু চেহারা বোঝা যায়নি। তাঁরা ওই প্রচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।’
কামরুননাহার আরও বলেন, দুজন কম্পিউটার অপারেটরের বাড়ি নড়াইলের সদর উপজেলায়। পুলিশের নিদের্শে তাঁদের দুজনকে ৪ জানুয়ারি রাতে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। রাত ১০টার দিকে পুলিশ ওই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলেজ থেকে থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় শীর্ষ নেতারা থানায় গিয়ে তাঁদেরর ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু আগে দায়ের হওয়া নাশকতা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এটা জঘন্য ঘটনা পুলিশ ঘটিয়েছে। নিরাপরাধ তিন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারকে দুর্ভোগে ফেলেছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি তদন্তাধীন। তদন্তে যেরকম পাওয়া যাবে, সে রকম প্রতিবেদন দেব আমরা।’