ঢেউয়ের কলতান হেইয়োরে হেইয়ো আর সারিবদ্ধ বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে উত্তাল খুলনার কয়রার শান্ত কপোতাক্ষ নদীতে দর্শক শ্রোতার উপস্থিতিতে শেষ হল নৌকা বাইচ। আর দু’ পাড়ের অর্ধ লক্ষ দর্শকের করতালিতে উৎসব মুখর ছিল পরিবেশ। শীতের বিকেলের মিষ্টি রোদে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উপভোগ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। হরেক রঙের পোশাকে মাঝি মাল্লাদের সমবেত কন্ঠে হেইয়ো হেইয়ো সারিগান। সবার উৎসুক দৃষ্টি আর মূর্হমূহ চিৎকার করতালি।
নির্মল আনন্দের খোরাক এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কয়রার কপোতাক্ষ নদীতে নৌকা বাইচ আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন । বিকাল ৩ টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেন কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু। এসময় আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা বা বিভাগে সুনাম অর্জন করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কয়রার সুন্দরবন টাইগার নৌকা। আর এই আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য কে টিকিয়ে রাখতেই আজকের আয়োজন। নৌকা বাইচ খেলা দেখতে আসা লোকজনের উপস্তিতিএবং তাদের আনন্দ উপভোগ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসহ সব আনন্দ আয়োজনেরই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। আর হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করন গ্রামীন জনপদের নৌকা বাইচ খেলা। কালের বিবর্তন ও আধুনিকায়নে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম এই খেলাটির। তবে বর্তমানে মাঝে মধ্যে দেখা যায় এই খেলা। দীর্ঘ সময় পরে লোকায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতির অংশ নৌকা বাইচ খেলা নতুনরুপে ফিরে এসেছে বাংলার গ্রামে গ্রামে। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অজপাড়া গায়ে জন্মগ্রহন করেছিলেন বলেই তিনি সবসময় গ্রাম ও গ্রামের মানুষজনকে ভালবাসতেন। দেশের স্বাধীনতা , মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসনিার প্রতিক নৌকা। এই নৌকার সাথে আবেগ অনুভুতি জড়িত রয়েছে।
আজ তিনি নেই ১৯৭৫ সালেই ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী ও কিছু বিপদগামী সেনা অফিসাররা ক্ষমতার লোভে তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল তার শত জন্মবার্ষিকীতে জাতির পিতার সূযোগ্য উত্তরসুরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ গ্রামকে শহরে পরিণত করার লক্ষে শেখ হাসিনা গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ মানুষের বিনোদনের জন্য উন্মোক্ত করে দিয়েছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কয়রা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজা, উপজেলা চেয়ারম্যান এস,এম শফিকুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভুমি) এম সাইফুল্লাহ, কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ এবিএম, এস দোহা (বিপিএম), কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এস,এম বাহারুল ইসলাম, মহেশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, আমাদী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঃ সালাম খানসহ পরিষদের ্ইউপি সদস্য ও রাজনৈতিকবৃন্দ।
এরপর শুরু হয় কাঙ্খিত সেই চোখ জুড়ানো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা । কাশার ঢং ঢং এবং দাঁড়িয়াদের বৈঠার শব্দ ছলাত ছলাত। এদিকে উৎসবমূখর পরিবেশে এ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে কপোতাক্ষ নদীর তীরে একপাশে কয়রা উপজেলা নদীর, অপর তীরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক দর্শনার্থী একত্রিত হয়। তারা তীরবর্তী রাস্তা, বিভিন্ন ঘাট, এবং নৌযানের ওপর বসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এ সময় নৌকা বাইচ নির্বিঘ্ন করতে টহল রত ছিলেন,উপজেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোষ্ট গার্ডসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির সদস্যরা। এবারের প্রতিযোতিায় প্রথম পুরষ্কার ১ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুরের সুন্দরবন টাইগার, দ্বিতীয় হয়েছে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া তারা পায় ৬০ হাজার টাকা, তৃতীয় কয়রার সোনার বাংলা ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।