তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের করা তিনটি আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার শুনানির এই তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়।
এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত সপ্তাহে একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চার ব্যক্তি হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গতকাল বুধবার আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। পৃথক তিনটি রিভিউ আবেদন একসঙ্গে শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৪২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে ছিলেন। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আইনজীবী শরীফ ভুইয়া, বিএনপির মহাসচিবের আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানিতে ছিলেন।
১৭ নভেম্বর ধার্য হলো শুনানির তারিখ
শুরুতে চার সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের আইনজীবী শরীফ ভুইয়া বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন। ৪: ৩ মতামতের ভিত্তিতে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন।
আদালত বলেন, পৃথক আবেদন দেখা যাচ্ছে।
তখন তিনটি রিভিউ আবেদনের নম্বর তুলে ধরে আইনজীবী শরীফ ভুইয়া বলেন, একটি আবেদন করেছেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। বিএনপির মহাসচিব একটি ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অপর আবেদনটি করেছেন। আজ অথবা আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। তবে আদালত সময় দিতে চাইলে আপত্তি নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আবেদনে যুক্তি রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরি দেখতে হবে। তাঁদের (আবেদনকারীদের) ভালো যুক্তি আছে। এখানে সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ ও জনগুরুত্ব রয়েছে। প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন।
সরকার তিনটি আবেদনেই বিবাদী উল্লেখ করে আইনজীবী শরীফ ভুইয়া বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায়ের পরপরই সংবিধান সংশোধন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। এই পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিটটি হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে থাকা দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়, যা নিয়ে রিট হাইকোর্টে শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। চার সপ্তাহ পর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আসতে পারে।
বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, রিভিউ আবেদন চার সপ্তাহের পর আসুক।
শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, ১৭ নভেম্বর দিন রাখা হলো। সেদিন কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
আলোচনায় পঞ্চদশ সংশোধনী
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি গত আগস্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদবিষয়ক সচিব, জাতীয় সংসদের সচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই রুল শুনানির জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে। হাইকোর্ট ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির এ দিন নির্ধারণ করেন।