রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় দুই শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে লোমহর্ষকভাবে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দিন আহম্মেদ লিটনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর ৭ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক তেহসিন ইফতেখার আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে গত নভেম্বরে এ চাঞ্চল্যকর মামলায় শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। ওইদিন বিশ্ব ইজতেমার কারণে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আসামি হাজির করা সম্ভব হয়নি। তাই পুনরায় ৩১ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
মামলার চার্জশিটে নিহতদের হত্যার বিবরণে দেখা যায়, ‘‘আসামি রাকিব উদ্দিন লিটন স্ত্রী ও সন্তানকে নিজ হাতে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার কথা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, আসামি রাকিব উদ্দিন লিটন বিটিসিএল এর জুনিয়র সহকারী ম্যানেজার পদে চাকরি করত। সে যাদেরকে হত্যা করেছে তারা তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে হয়। তার স্ত্রীর নাম মুন্নী রহমান, ছেলের নাম ফারহান উদ্দিন ও মেয়ের নাম লাইবা রহমান। ছেলের বয়স ১২ বছর, মেয়ের বয়স ৩ বছর ৮ মাস। উক্ত আসামি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি পনের লাখ টাকার মতো সুদে ঋণ নিয়েছিল। পাওনাদারদের টাকা দিতে পারছিলেন না। পাওনাদাররা বাড়িতে এসে যা তা বলত। সে সুদের টাকার জন্য মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল। ঘটনার দিন বাসায় কোনো ঝগড়া হয়নি। তবে সে খুব চিন্তিত ছিল এবং নিজেকে শেষ করতে পারছিল না।”
‘‘হঠাৎ কি যেন হয়, ঘটনার দিন সকালবেলা সে হাতুড়ি দিয়ে তার স্ত্রীর মাথায় জোরে আঘাত করে স্ত্রী শুয়ে থাকাবস্থায়। স্ত্রী ঐ সময় মারা যায়। উক্ত আসামি তার স্ত্রীকে মারতে বেশ কয়েকটি আঘাত করে এবং গলা টিপে ধরে। তখন তার মেয়েটি টিভি রুমে ছিল। টিভি দেখার সময় উক্ত আসামি রশি দিয়ে মেয়েটির গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করে। তারপর মেয়ের লাশ নিচে স্ত্রীর পাশে শুইয়ে রাখে। ছেলেটি তার দাদুর রুমে ঘুমাচ্ছিল। আসামি রশি দিয়ে ছেলের গলায় পেঁচানোর সময় ছেলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে, অনেক হাউ মাউ করে কাঁদে। তারপর জোর করে ছেলেটির গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরে। ছেলেটি ঐ জায়গায় মারা যায়।”
‘‘তারপর উক্ত আসামি নেশার ঘোরে নোটে কি যেন লিখতে থাকে। এরই মধ্যে কলিং বেল বেজে ওঠে। কাজের বুয়া আসে। কাজের বুয়াকে বলে আজ কাজ করা লাগবে না। অতঃপর কাজের বুয়া চলে যায়। কাজের বুয়া চলে গেলে উক্ত আসামি তাদের লাশ ঘরের মধ্যে রেখে তালা মেরে চলে যায়। আসামি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে। এরপর কি হয়েছে তা সে জানে না। সে পাগলের মতো ঘুরতে থাকে। মাঝে মাঝে জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরে পাবার পর দেখে সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। তারপর পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। উক্ত আসামি কিসের জন্য তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের হত্যা করেছে সে কিছুই মনে করতে পারছে না। তবে সে স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। তবে সে আত্মহত্যা করতে পারেনি। ঋণের টাকার জন্য হতাশাগ্রস্ত হয়ে সে এই কাজ করেছে। সে অপরাধ করেছে। সে উক্ত ঘটনায় অনুতপ্ত।”