পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অপহরণ,গুম-খুনসহ সশস্ত্র তৎপরতা মাধ্যমে ব্যাপক চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলোয় বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অসন্তুষ্ঠ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে আলাপ করে আমরা বুঝতে পারছি পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে; এটা আমাদের জন্য দু:খজনক।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঘটেনি। আমরা চাই একটি সমৃদ্ধশীল সোহার্দপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে উঠুক। সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন অসম্প্রদায়িক মতাদর্শে একই সাথে বসবাস করুক। এই লক্ষ্যে অত্রাঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষজনকে সহনশীল হওয়ার আহবানও জানিয়েছেন কমিশন চেয়ারম্যান।
তিনি বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক রাঙামাটিতে আয়োজিত গণশুনানী পরিচালনাকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. সেলিম রেজা, নারায়ণ চন্দ্র সরকার,কংজরী চৌধুরীসহ কমিশসনের সকল সদস্যগণ ও তিন পার্র্বত্য জেলার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, রাজনৈতিকদলসমুহ, গণমাধ্যমকর্মী. কলেজ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের পরিচালনায় উক্ত গণশুনানিতে তিন পার্বত্য জেলা থেকে আগত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষজন বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ০২রা ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হলেও পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরে আসেনি। যাদের সাথে চুক্তি করেছে সরকার তারা এখনো অস্ত্র ছাড়েনি। চুক্তিতে অবৈধ অস্ত্র সরকারের কাছে জমাদানের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করতে হবে উল্লেখ থাকলে ও পাহাড় থেকে তারা অস্ত্র জমা না দিয়ে প্রতি নিয়ত খুন-গুমসহ পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে রাখছে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানের এক নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আমাদের দেশের নাম হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের এক দশমাংশ এলাকা বিস্তৃত পার্বত্য চট্টগ্রামকে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে এটা উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিকে অস্বীকার করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক সাংবিধানিকভাবেই সমান সুযোগ পাওয়ার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডে শুধুমাত্র উপজাতীয়দেরকেই কৌটা সুবিধা দেওয়া হয়ে আসছে। এই ক্ষেত্রে অত্রাঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মানবাধিকার লঙ্গিত হচ্ছে।
গণশুনানীতে অংশ নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে চুক্তি সম্পাদনকারী দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাদের নিজ বসতঘরে থাকতে পারে না। এলাকায় গেলে আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে খুন-গুম হতে হয়। জেলা পরিষদের সদস্য হয়েও নি ঘরে থাকতে নাপারাটা কি মানবাধিকার লঙ্গণ নয়? এমন প্রশ্নও তুলেছেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংসুছাইন চৌধুরী।
অটোরিক্সা সমিতির প্রতিনিধিরা বলেন, পাহাড়ে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে এখানে যাত্রীবাহী গাড়ি চালাতে হয়। এর পরে ও বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবাহী অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে কোনো প্রকার জীবনের নিরাপত্তা নেই। পাহাড়ে এই সন্ত্রাসীদের ধারা প্রতিনিয়ত গুম খুন হতে হচ্ছে। তাহলে পাহাড়ে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?
ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দরা বলেন, পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত সাধারণ মানুষ ভালো নেই। পার্বত্য চুক্তি হলে ও আমাদের প্রতিনিয়ত চাঁদা দিতে হচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের। তাহলে চুক্তি হলেও কেন আমাদের চাঁদা দিতে হবে সন্ত্রাসীদের? জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য দুই লাখ টাকার রাস্তার কাজ করতে গেলেও উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়!
এদিকে গণশুনানীতে অংশ নেওয়া পাহাড়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না। যার কারণে পাহাড়েও শান্তি ফিরে আসছে না। বিধিবিধান মোতাবেক চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।