পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে দেশ গড়া যাবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, পুলিশই সম্মুখসারির মানুষ। পুলিশ মানে আইন ও শৃঙ্খলা। আর এই আইন ও শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই ঢালুক, কোনো কাজে আসবে না।
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার যা কিছুই করতে চাক না কেন, যে ভঙ্গিতেই করতে চাক না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সম্মুখসারির মানুষ। করে দেবে না, তারা এনভায়রনমেন্টটা (পরিবেশ) সৃষ্টি করে। এনভায়রনমেন্ট না থাকলে কোনো কাজ হয় না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ পুলিশের কথার প্রসঙ্গে বারবার আমরা বলেছি দুটি কথা আইন ও শৃঙ্খলা, এটাই হলো পুলিশ। ... পরিবেশ সৃষ্টি করা। আইনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আইন যদি না থাকল তাহলে সরকারই কী, গণতন্ত্র কী, অধিকার কী, নাগরিকদের কী, কিছুই থাকে না। এটাই ছিল মূল জিনিস। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে, বা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলে তখন বাকি জিনিসগুলো হয়। বীজ লাগানো হয়, চারা লাগানো যায় সবকিছু হয়। আইন না থাকলে ও শৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই ঢালুক, কোনো কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ একটি মস্ত বড় সম্ভাবনাময় দেশ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তবে সেই সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবের দিকে আনতে পারছি না, ঠেকে যাচ্ছি। আজকে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, মস্ত বড় সুযোগ। সে সম্ভাবনাকে কার্যে পরিণত করা। এবং জুলাইয়ের এ অভ্যুত্থানের ফলে সেই সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্ভাবনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। কারণ হারিয়ে ফেলা সোজা। মুহূর্তে হারিয়ে যায়। এ সম্ভাবনাকে ধরে রাখা। যেটুকু সময় আমাদের আছে, এর মধ্যে আমরা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে যারা আসবে, তারাও আশা করি চেষ্টা করবে, পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই, এই পথে আমরা এগোলে সম্ভাবনাগুলো বাস্তবে পরিণত হবে।’
বাংলাদেশকে নেতৃত্বদানকারী দেশের তালিকায় দেখার আশা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা সুন্দর দেশ হবে, নিয়মতান্ত্রিক দেশ হবে, গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেটাতো বটেই। আমি করি বাংলাদেশ পৃথিবীর যে সব অগ্রগামী দেশ আছে, যারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়, বাংলাদেশ তাদের একটি হতে পারে। এ রকম একটা সম্ভাবনা আছে। এটা কোনো আত্মতুষ্টির জন্য নয়, একটু বিচার করলে মনে হবে এই সুযোগ আছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে সবাই আমাদের জোরালোভাবে সমর্থন করল। তারা মনে করে এই দেশ যদি ওঠে দাঁড়াতে পারে তাহলে তারা ভালো সঙ্গী হবে সবার।তারা আমাদের ওপর ভরসা রেখেছে, আমরা নিজেদের ওপর সেই ভরসা আনতে চাই।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন করে যে যাত্রা শুরু হলো, এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ, এই সুযোগটাকে যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। সুযোগগুলো তৈরির একটি পরিবেশ লাগে। সেখানে পুলিশ বাহিনী এক মস্ত বড় ভূমিকা পালন করে। আইন ও শৃঙ্খলা। আইনটা যদি আমরা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে যেকোনো কোনো যুদ্ধ জয় করা সম্ভব।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন পরিবেশ সৃষ্টিতে পুলিশের একটি বড় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। পুলিশ বাহিনীর মুশকিল হলো ওই অন্ধকার যুগের তারা একটিভ পার্টিসিপেন্ট (সক্রিয় অংশগ্রহানকারী) ছিল। নিজের ইচ্ছায় না, সরকারি কাজ করতে গিয়ে, হুকুম পালক করতে গিয়ে এমনটা করতে হয়েছে। কাজেই এখন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য তাঁদের ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা (পুলিশ) নুতন বাংলাদেশ গড়ব। আমাদের অনেকে দোষ দেয়। আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। আমরা এই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা ভালো মানুষ। আমরা দেখ কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তাটা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা দেখিয়ে ছাড়ব। আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাব, আমাদের হাত দিয়ে এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে, আমরা তাতে বড় একটা ভূমিকা পালন করব। আমাদের কাছেই আছে আইন এবং শৃঙ্খলা। এটা আমরা প্রতিষ্ঠা করব।...পুলিশ হবে বন্ধু। আইন হলো সবার আশ্রয়। পুলিশ হবে সেই আশ্রয়দাতা। সেই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’