শখ থাকলেও পূরণের সাধ্য সবার থাকে না। তাই মনে ধরলেও অনেক সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে না পারার আক্ষেপ থেকেই যায়। বছরে দুই-তিনবার নানা ধরনের ব্র্যান্ড ছাড় দেয়, যেমনটা এখন চলছে। এখনই সুযোগ, দেরি না করে পছন্দের ব্র্যান্ড ঘুরে জিনিস কিনতে পারেন। থাকল সেসবেরই খোঁজখবর।
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সসহ নানা শপিং মল ঘুরে দেশীয় ব্র্যান্ডের নানা পণ্যে বিশাল ছাড় দেখা গেছে। বহুজাতিক কিছু ব্র্যান্ডেও চলছে মূল্যছাড়। ফ্যাশন হাউসগুলোয় ব্র্যান্ডভেদে পোশাকে ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে। পোশাক ছাড়া গয়না, ব্যাগ, জুতা, প্রসাধনসামগ্রীর ওপরও রয়েছে মূল্যছাড়। যদিও এ ধরনের সামগ্রীর সংখ্যা সীমিত। মূল্যছাড় দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেশির ভাগ দোকান থেকে জানানো হয়, গ্রীষ্মকালীন পোশাকের সম্ভার খালি করতেই নির্বাচিত পণ্যের ওপর মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর বনানীতে দেশীয় পোশাকের দোকান কুমুদিনী হ্যান্ডিক্র্যাফটসে চলছে গ্রীষ্মকালীন ছাড়।
নির্বাচিত বিশেষ কিছু শাড়ি, কুর্তা, সালোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ছেলে ও শিশুদের পাঞ্জাবি, ফতুয়াভেদে চলছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্যছাড়। শারদীয় দুর্গাপূজা পর্যন্ত থাকবে এ সুযোগ। সুতি ও হাফ সিল্ক শাড়ি ২৫ ও ৫০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এই তালিকায় সুতি ও অ্যান্ডি সুতির পাঞ্জাবিও আছে। তিন থেকে চার হাজার টাকার শাড়ি আপনি অর্ধেক দামেই কিনে নিতে পারবেন। তবে এখানে অনলাইন কেনাকাটায় ছাড়ের সুযোগ নেই। আরেক ফ্যাশন হাউস দেশালেও দেওয়া হচ্ছে ছাড়। যেকোনো পাঞ্জাবি, শার্ট, শিশুদের পোশাক, জামদানি, মেয়েদের জুতায় চলছে ৩০ শতাংশ মূল্যছাড়। অন্যদিকে মেয়েদের থ্রি–পিস, কামিজ, টপ, কুর্তা, শাড়ি, টি-শার্ট, চামড়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকছে। আবার ছেলেদের টি-শার্ট, কো-অর্ড সেট ও ওড়না পাওয়া যাচ্ছে ২০ শতাংশ কম দামে। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ছাড়ে কেনাকাটা করা যাবে।
ধানমন্ডির অরণ্যতে সব ধরনের পোশাকের ওপর চলছে ২০ শতাংশ বর্ষাকালীন ছাড়। চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দোকানের পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটায়ও পাওয়া যাবে ছাড়। ঘুরতে ঘুরতে নজর কাড়ল দুই দেশীয় ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ ও অঞ্জন’সের ছাড়। যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানগুলোয় পছন্দের পোশাকটি লুফে নিতে মানুষের ভিড়ও ছিল বেশি। নারী-পুরুষ ও শিশুদের নির্বাচিত পোশাক ছাড়া ব্যাগ, ঘরের টুকটাক জিনিসপত্র, কুশন কভার ইত্যাদির ওপর চলছে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়।
গয়নাতেও পাওয়া যাচ্ছে ছাড়ছবি: অগ্নিলা আহমেদ
রঙ বাংলাদেশের পাঞ্জাবি, শার্টের মূল্যের ওপর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে। খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, বেশ চড়া মূল্যের পাঞ্জাবি অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। ৭ হাজার টাকার একটি পাঞ্জাবি ৩ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার পাঞ্জাবিতেও চলছে ৫০ শতাংশ ছাড়। শাড়িতেও আছে ছাড়। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে এসব পোশাক মানুষের সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে। অনলাইনেও তাদের কার্যক্রম চলে, তবে সবচেয়ে লাভবান হবেন সশরীর দোকানে এসে পণ্য বেছে কিনলে। অন্যদিকে অঞ্জন’সে বিভিন্ন পোশাকে চলছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। বাছাইকৃত সালোয়ার–কামিজ, শাড়ি, ব্লাউজের ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। কুর্তা, বাচ্চাদের পোশাক, ব্লেজারের মধ্যেও আছে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়। মানভেদে পাঞ্জাবিতে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে অঞ্জন’স। চলতি মাসের ২১ তারিখে শেষ হবে সুযোগটি। দোকান ঘুরে মনে হলো, এবারের ছাড়ে পাঞ্জাবিপ্রেমীরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।
নবরূপা, টুয়েলভ, ইনফিনিটি, রেড অরিজিন, ফ্রিল্যান্ড, জেন্টল পার্ক, কিউরিয়াস, রাইজ, যাত্রা, র-নেশন, ফিওনা, মাইক্লো, আমব্রেলা, টেক্সমার্ট, অকাল্টসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের শাখায়ও আছে মূল্যছাড়। কোনো নির্দিষ্ট পোশাকে সীমাবদ্ধ নয় সুযোগটি। শাড়ি, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাক, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া—সবকিছুতেই শতকরা হারে ছাড় রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। কত দিন এই মূল্যছাড় বহাল থাকবে, জিজ্ঞেস করলে গুটিকয় ফ্যাশন হাউস ছাড়া বেশির ভাগ দোকানই উল্লেখ করে, যত দিন পর্যন্ত গচ্ছিত পণ্য শেষ না হবে, তত দিন চলবে এই ছাড়। পোশাকের পাশাপাশি ফ্যাশন হাউস রাইজে দুল, মাস্ক, ব্যাগ, জুতা, ছেলেদের বেল্ট, টাই, ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেলের ওপরও ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।
মূল্যছাড়ে কেনা জিনিসটি দেখেশুনে কিনতে হবে, পরে সেটা আর ফেরত কিংবা বদল করা যাবে নাছবি: অগ্নিলা আহমেদ
ছাড়ে বেশ ভালো কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে ছেলে ও শিশুদের পোশাকে। বাহারি ব্র্যান্ড যেমন আর্টিসান, রাইজ, ফিওনা, জেন্টল পার্ক, টুয়েলভ, আমব্রেলা যেন স্টক শেষ করতেই পোশাকের ভান্ডার খুলে বসেছে। আর্টিসানেও কেনাকাটা করতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ছেলেদের প্রায় সব ধরনের পোশাকের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে। একই দৃশ্য দেখা গেল রাইজের শাখায়ও। আমব্রেলায় বেশির ভাগ পোশাক ৬০ শতাংশ মূল্যছাড়ে নেওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের পোশাকে রয়েছে ৩০ শতাংশ ছাড়। নাগালের দামে শিশুদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ১ হাজার ৯০০ টাকার একটি ঘাগড়া দেখলাম ৬০ শতাংশ কমে ৮৪০ টাকার মধ্যে পেয়ে গেলেন এক ক্রেতা। অন্যদিকে ফিওনায় যেকোনো পাঞ্জাবির ওপর ৫০ শতাংশ ছাড়। অনলাইনেও এই সুবিধা দিচ্ছে তারা। বসুন্ধরা শপিং মলের বেবি শপে দেখা গেল, যেকোনো পোশাকের ওপর ৫০ শতাংশ ছাড়।
তবে মূল্যছাড়ে শখের পোশাকটি কিন্তু বেশ খুঁটিয়ে দেখেশুনে নিতে হবে। কারণ, কোনো ব্র্যান্ডই সেটা আর ফেরত কিংবা বদলি করবে না।