ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। বাংলাদেশও বলেছে, এটি দূর করতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর যমুনার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অপপ্রচারের জবাব লিখিত ও মৌখিক—বহুভাবেই বলেছি, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ খুবই কম। সেগুলো কখনো কখনো ব্যক্তিগত, বেশির ভাগই রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার না এটির অংশ, না এটি কোনোভাবেই বরদাশত করছে। যেখানে যেখানে এ রকম অভিযোগ এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে যে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, এই মেঘটি দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, এই মেঘটি দূর করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যে সম্পর্ক এটি এগিয়ে নিতে এবং আরও জোরদার করতে আগ্রহী। জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে, এটি তারা মনিটর করেছে, দেখেছে ও অবগত।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, আমরা সার্ককে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চাই। আমরা যে একসঙ্গে বিমসটেকে আছি এবং এখানে থাকাটা জরুরি, এটাও বলা হয়েছে। বিভিন্ন যে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে, সেটার বিষয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে।’
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী যিনি সেখানে (ভারতে) আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে কথাবার্তা বলছেন এবং বিভিন্ন কথাবার্তা বলার মাধ্যমে একধরনের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটির ব্যাপারে উদ্বেগ খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অপপ্রচারের মাধ্যমে সম্প্রীতির দেশ বলে বাংলাদেশের যে ইমেজ আছে, সেটিকে এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এগুলোর ব্যাপারে তাদের (ভারতের) বক্তব্য হচ্ছে, এগুলোর ক্ষেত্রে ভারত সরকার কোনোভাবে দায়ী না। সরকার আসলে এগুলো করছেও না, এগুলো ‘ওন’ও করছে না। এগুলো মিডিয়া বা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।
ভিসার বিষয়েও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এখন ভিসা দেওয়া যেহেতু কমিয়ে রাখা হয়েছে, এটি অনেক অসুবিধা সৃষ্টি করছে। তাদের (ভারতের) পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ তারা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘হাইকমিশনে যে সহিংস আক্রমণ হয়েছে, সে ব্যাপারে আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছি, আগেই তারা (ভারত) সে ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছে। আজকে যেহেতু তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং জোরদার করার কথা বলছেন, কাজেই আমরা ধরে নেব সে ব্যাপারে তাদের যে দুঃখ প্রকাশ, তারা একই অবস্থানে আছেন। তাই নতুন করে আর এই কথাটি বলা হয়নি। কিন্তু বারবার যে প্রোপাগান্ডাগুলো হচ্ছে, প্রোপাগান্ডাগুলো একেবারেই সঠিক না, যে প্রোপাগান্ডাগুলো বাংলাদেশের সুনামের জন্য ক্ষতিকারক, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা আমাদের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এগুলো সরকার ওনও করে না, সরকার এগুলোর সঙ্গে মোটেও জড়িত না।’