গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আজ মঙ্গলবার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ওয়েবসাইটে পরিবর্তন দেখা যায়। কোনো ওয়েবসাইটেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পরিচিতিতে আগের মতো মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো ছবি দেখা যাচ্ছে না। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ছবি ও পরিচিতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে গ্যালারিতে বা হোম পেজের নকশায় এখনো কয়েকটি ওয়েবসাইটে তাঁদের কিছু ছবি রয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরের ওয়েবসাইটে আগে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব বা নির্বাহী পরিচালকের ছবি ও তথ্যাদি দেখা যেত। আজ বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে ছবি ও তথ্যে পরিবর্তন দেখা গেছে। সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস।
দেখা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে শুধু মন্ত্রিপরিষদ সচিবের তথ্য ও ছবি রয়েছে। এই ওয়েবসাইটের সব বিভাগ সক্রিয় আছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইট চালু আছে। ওয়েবসাইটের মূল পাতায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ছবি বা তথ্য নেই। তবে গ্যালারিতে তাঁদের ছবি রয়েছে। বিভাগের সচিব মো. মুশফিকুর রহমানের ছবি দেখা যায় সাইটটিতে। এটি সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে আজ ৬ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায়।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ওয়েবসাইট ঠিকানা চালু আছে। ঠিকানার ডান পাশে সচিব মো. সামসুল আরেফিনের ছবি দেখা যায়। ওয়েবসাইটের নোটিশ বিভাগে সর্বশেষ ২৮ জুলাই দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটও চালু আছে। ওয়েবসাইটের ডান দিকে সচিব মো. সামসুল আরেফিন ও নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের ছবি ও তথ্য দেখা যায়।
সরকারের অনলাইনের সব কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখা যায় এজেন্সি টু ইনোভেটকে (এটুআই)। সোমবার থেকে এটুআইয়ের ওয়েবসাইট পুরোপুরি বন্ধ দেখা যায়। প্রবেশের সময় কোনো ত্রুটি দেখায় না, তবে সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট চালু নেই। সাইটে দীর্ঘক্ষণ প্রবেশের চেষ্টা করা হলেও ঢোকা যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন তথ্য এই ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যেত।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করা হলেও প্রবেশ করা যায়নি। ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম সিস্টেমের (ডিএনএস) ত্রুটির কারণে সাইটটি বন্ধ রয়েছে বলে দেখা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট চালু নেই। ডিএনএস-সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে ওয়েবসাইটটি দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারের অর্থায়নে তৈরি ‘মুজিব ১০০’ ওয়েবসাইটটিতে সার্ভারজনিত ত্রুটি দেখা যায়। ঠিকানায় ক্লাউডওয়েসের ওয়েবসাইট বিকলের নোটিশ দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব ঠিকানায় যাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে (https://btv.gov.bd) আজ ঢোকা যায়নি। সাইট লোড হতে দীর্ঘক্ষণ ব্যয় হলেও সাইটটি খোলেনি।
দুপুরের পর বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েব পোর্টালটি নিষ্ক্রিয় থাকলেও বিকেল পাঁচটার পর থেকে এটি সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। সাইটটির ই-সেবার তালিকার মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন নিবন্ধন সেবা চালু আছে। বিভিন্ন আর্থিক বিল দেওয়ার সরকারি ওয়েবসাইট একপের ওয়েবসাইট চালু রয়েছে। সরকারের আরেক ওয়েবসাইট মাইগভ চালু আছে। এটি থেকে বিভিন্ন সরকারি সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চালু আছে। তবে এতে মন্ত্রীর ছবি ও পরিচিতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের ছবি ও বিস্তারিত তথ্য দেখা যায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চালু আছে। ওয়েবসাইটে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তা হিসেবে মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো তথ্য বা ছবি নেই। এখন শুধু জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর ছবি ও তথ্য দেখা যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চালু আছে। সচিব মো. আশরাফ উদ্দিনের ছবি ও তথ্য দেখা যায়। সর্বশেষ ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ড ৪ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ হয়েছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট চালু আছে। ওয়েবসাইটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের ছবি ও তথ্য দেখা যায়। এ ছাড়া এনআইডি অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আইডি কার্ডের সংশোধন ও আবেদন করা যাচ্ছে এই ঠিকানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চালু আছে। জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেনের ছবি ও তথ্য দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো ধরনের তথ্য বা ছবি দেখা যায়নি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দীর্ঘ সময় নিয়ে খুলতে দেখা যায়। ঠিকানা ডেস্কটপ ও মোবাইল ব্রাউজার দিয়ে চেষ্টা করা হলে দীর্ঘ সময় পর দেখা যায়। ওয়েবের ডান পাশে এখন শুধু কর্তাব্যক্তি হিসেবে জ্যেষ্ঠ সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের ছবি ও তথ্য রাখা হয়েছে। ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পুরোনো ছবি সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ লিংকের তালিকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সাইটের ফটো গ্যালারি কোনো ছবি দেখা যাচ্ছে না।