আজ আমাদের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। “এক নদী রক্ত পেরিয়ে/ বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য”-আনার দিন আজ। আজকের দিনটি এই সবুজ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবের দিন; মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ জনপদে ভিসুভিয়াসের মত জ্বলে উঠেছিল স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখা। ৫২ বছর আগের এই দিনটি বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা অর্জনের শুভ সূচনা।
বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৫ মার্চ ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের রক্তলাল সূর্যোদয় বয়ে এনেছিল বহু প্রতীক্ষিত স্বাধীনতার বারতা। এদিন সূচিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের এই মার্চেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসন বিরোধী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
একাত্তরের পহেলা মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের বিষয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার পর আপামর জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জাতির পিতার ভাষণের দিন কেন্দ্র করে মার্চের পয়লা সপ্তাহ থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত-কলকারখানা কার্যতঃ বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে দেশ।
এই প্রেক্ষাপটে ৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার বিশাল জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ বাঙালি জাতি চূড়ান্ত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সারাদেশে বেজে ওঠে স্বাধীনতার দামামা। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
এর পরে দীর্ঘ নয় মাসের ইতিহাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজের মাধ্যমে মানবজাতির ইতিহাসকে কলংকিত করার ন্যক্কারজনক অধ্যায়; আর এ ঘৃণ্য ইতিহাসের বিপরীতে তখন রচিত হয় ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়, মুক্তিকামী বাঙালির বীরত্বগাঁথা।
একাত্তরের ১৭ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকার।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় দখলদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
আজ ২৬ মার্চ প্রত্যুষে সূর্যদোয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীর শহীদদের অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আজ সরকারি ছুটি। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সারাদেশে উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বেতার ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিশু, ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও আজকের কর্মসূচিতে রয়েছে সেমিনার, আলোচনাসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদল নেতা রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য হিসেবে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লে¬খ করেন। তিনি করোনা যুদ্ধে জাতির জয়ের প্রত্যাশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, আমরা যেমন ১৯৭১ সালে সংঘবদ্ধভাবে কাঁেধ কাঁধ মিলিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলাম। তেমনি ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন যুদ্ধেও জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।