আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমার ভাষা আমার পরিচয় শীর্ষক কথা ও কবিতার আসর অনুষ্ঠিত
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 22-02-2023
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার বিকাল ২:৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটির আয়োজনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে “আমার ভাষা আমার পরিচয়” শীর্ষক “কথা ও কবিতার আসর” অনুষ্ঠিত হয়। 

আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটির আহবায়ক এ কে শেরাম-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত  কথা ও কবিতার আসর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ভাষা গবেষক অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, এমএলই ফোরাম'র সদস্য সচিব তপন কুমার দাশ, সাদরি ভাষা বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্রনাথ টপ্পো, কাপেইং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা এবং কবি, সংগঠক ও লিটলম্যাগ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা প্রমুখ।

আসর-এর মূল পর্ব শুরুর পূর্বে আয়োজন কমিটির মূখ্য সংগঠক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক ২০২২ হতে ২০৩২ এর পটভূমি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। 

তিনি বলেন, জাতিসংঘ বিশ্বের সকল আদিবাসী সুরক্ষা ও বিকাশ তরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালকে আদিবাসী ভাষাবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ভাষাবর্ষের কর্মসূচি চলাকালে ২০২২ থেকে ২০৩২ সালকে আদিবাসী ভাষা দশক হিসেবে উদযাপন করার জন্য ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ তাদের নিজ নিজ দেশের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও সুরক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এই ঘোষণার সূত্র ধরেই বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা অধিকার কর্মীদের উদ্যোগে প্রথমে আদিবাসী ভাষাবর্ষ উদযাপন কমিটি এবং পরে আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। চলমান এই দশক উদযাপন-এর প্রত্যশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন,  দেশের সকল আদিবাসী ভাষা যেন সুরক্ষা পায় এবং টিকে থাকে আপন মহিমায়। তিনি নতুন প্রজন্মকে নিজ নিজ মাতৃভাষা সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সম্মনিত অতিথি'র বক্তব্যে প্রফেসর ড. সৌরভ সিকদার বলেন, দেশে এমন অনেক আদিবাসী ভাষা রয়েছে, যেগুলোকে সুরক্ষা, বিকাশ ও প্রসারের জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব না হলে, সেসব ভাষা চিরতরেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে। তাই, প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই দেশের সকল আদিবাসী ভাষাতে সংরক্ষণ, বিকাশ ও প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

যোগেন্দ্রনাথ টপ্পো বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগ বা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে আদিবাসীদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সমীক্ষা ও জরিপের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জনসংখ্যা বিষয়ে তথ্য গোপন করা হয়। সঠিক জনসংখ্যার তথ্য না থাকায় অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী সরকারি নানা উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় বলে তিনি মনে করেন।

তপন কুমার দাশ বলেন, সরকার বিপুল উৎসাহে দেশের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে যায়, যা থেকে এখনো আমরা উঠে আসতে পারিনি। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। জনাব দাশ আদিবাসীদের ভাষা বিপন্নতা থেকে উঠে আসার জন্য কোন জড়তা বা সংকোচ বোধ না করে নিজেদের মাতৃভাষা সর্বত্র ব্যবহারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আহবান জানান।

অতিথির বক্তৃতায় লিটলম্যাগ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের যেমন যত্নশীল হতে হবে, তেমনি হতে হবে সাহসী। তিনি নতুন প্রজন্মের নারীদেরকে সকল বাধা অতিক্রম করে নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি করার জন্য আহবান জানান।

কাপেইং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, ইউনেস্কো বিশ্বের সকল দেশে উদযাপনের জন্য ২০২২ সাল থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময়কালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকারের উদ্যোগে এই দশক উপলক্ষে কোন কর্মসূচি এখনো দৃশ্যমান নয়। দেশের কোন ভাষাই যেন হারিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।

অতিথিবৃন্দ ছাড়াও শিক্ষক ও ভাষা গবেষক আরযমিত্র চাকমা, হেমা চাকমা ও হলা চন্দ্র ত্রিপুরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্যতম অতিথি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও একটি আচিক ভাষার কবিতা প্রেরণ করেন, যা পাঠ করে শোনান মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।

কবি আনন্দ জ্যোতি চাকমা'র সঞ্চালনায় উপস্থিত অতিথিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।


 

শেয়ার করুন