ইন্টারনেট বন্ধের জন্য সরকারের নির্দেশনা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় কেব্ল কাটা পড়েছে, আগুনে পুড়েছে এবং বজ্রপাতের ঘটনায় ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যাহত হয়েছিল। দ্রুতই তা সচল করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিনে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরদিন শুক্রবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায়ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি পাশের জেলা রাঙামাটিতেও সংঘর্ষ হয়। এসব সংঘর্ষের সময় দুই জেলার অনেক গ্রাহক নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে আজ শনিবার নাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই জেলায় কেব্ল কাটা পড়েছে, বজ্রপাত ও আগুনে কেব্ল পুড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্রুতই যেন ইন্টারনেট সেবা সচল করা হয়, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, টেলিযোগাযোগ সেবাকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারার আওতামুক্ত রাখতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অপারেটর রবি সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালাসহ আশপাশের এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার সকালের মধ্যেই নেটওয়ার্ক পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। তবে গত রাত থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় সকালে আবার সেবায় বিঘ্ন ঘটে।
সূত্রের দাবি, খাগড়াছড়িতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা দেয় মূলত রবি ও টেলিটক। রবি খাগড়াছড়িতে সামিট ও বিটিসিএলের ফাইবার অপটিক কেব্ল ব্যবহার করে। টেলিটক সেবা দেয় মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার রাতে ঝড়ের পর খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। আট ঘণ্টা বিকল্প ব্যবস্থায় (জেনারেটর ও ব্যাটারি) নেটওয়ার্ক চালু রাখা হয়েছে। এরপর আর সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
সাহেদ আলম আরও বলেন, ফাইবার অপটিক কেব্ল-সংক্রান্ত সমস্যাটি গতকাল শুক্রবার সমাধান করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ফেরায় দুপুর ১২টার পর থেকে নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এদিকে রাঙামাটিতে স্থানীয় পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইয়েস নেটের মালিক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার রাঙামাটি শহরের বনরূপায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে অগ্নিসংযোগের কারণে ব্রডব্যান্ডের তার পুড়ে যায়। এতে অনেক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আজ সকালে সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ নেই। এ কারণে জেনারেটর দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
আইএসপিএবি সূত্র বলেছে, অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল কাটা পড়া ও ইন্টারনেট সংযোগ কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কিছু কিছু এলাকায় স্বল্পসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এদিকে বিটিআরসি আজ দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দীঘিনালায় সংঘর্ষ চলাকালে বিকেল চারটার দিকে সামিট ও বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কাটা পড়ায় রবির ১৬টি টাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত তারা ১৪টি টাওয়ার সচল করতে পেরেছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে টেলিটকের ৭২টি টাওয়ার রয়েছে। তাদের ২৯টি টাওয়ার বর্তমানে অচল রয়েছে।
বিটিআরসি বলছে, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ব্রডব্যান্ড সেবা সচল রয়েছে। তবে কিছু কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় স্বল্পসংখ্যক গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না। বিটিআরসি কোনো ধরনের ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনা দেয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।