ছাগল–কাণ্ড: মতিউরের গ্রামে গিয়ে যা জানা গেল
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 24-06-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাট দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদ পার হয়ে ওপারে গেলে মুলাদী উপজেলা। সেখানে বাহাদুরপুর গ্রামের কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, ‘কোথায় যাবেন? পিন্টু সাহেবগো বাড়ি? ’ এই পিন্টু সাহেব হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান।

ফেরিঘাট থেকে মুলাদী উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই পথ ধরে যেতে মাঝে পেয়াদারহাট নামে একটি গ্রামীণ বাজার। সেখান থেকে পূর্ব দিকে খালের পাড় ধরে চার কিলোমিটার সরু পথ গেলে বাহাদুরপুর গ্রাম। এ গ্রামেই মো. মতিউর রহমানের বাড়ি।

বাহাদুরপুর গ্রামে মতিউরের বাড়ির সামনে খালের ওপরে পাকা সেতু। বাড়িতে ঢুকতে একপাশে তিনতলা হাফেজি মাদ্রাসা, আরেক পাশে দোতলা মসজিদ। মাঝখানে তোরণ। তোরণ পার হয়ে ভেতরে দোতলা বাড়ি। বাড়ির কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা। বাড়ির সামনে কয়েকজনকে পাওয়া গেল।

তাদের একজনের নাম মো. ফকরুদ্দিন, অপরজন মাহমুদুন্নবী। দুজনই এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের চাচাতো ভাই। মাহমুদুন্নবী ঢাকায় ওষুধের ব্যবসা করেন। আর ফকরুদ্দিন এই বাড়ি ঘিরে গড়ে ওঠা মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ পরিচালনায় গঠিত হাওলাদার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক।

মতিউর রহমান সম্পর্কে কথা তুলতেই মাহমুদুন্নবী বললেন, ‘মানুষ মানুষের ভালো সহ্য করতে পারে না। ঈর্ষান্বিত হয়ে শত্রুতা করে। সে জন্যই আজ মতিউর রহমানের মতো একজন ভালো মানুষকে নিয়ে এত টানাহেঁচড়া চলছে।’ মতিউর সম্ভ্রান্ত ও ধনী কৃষক পরিবারের সন্তান দাবি করে মাহমুদুন্নবী বলেন, মতিউরের দাদা হাজি আফাজ উদ্দীন হাওলাদার ব্রিটিশ আমলে জাহাজে করে হজ করতে গিয়েছিলেন। বাবা হাকিম হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। পরে কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।

তবে এলাকার লোকজনের ভাষ্য, মতিউরের বাবা ও পরিবার খুব একটা সচ্ছল ছিল না। যে জমিজমা ছিল তা দিয়ে খেয়ে-পরে মোটামুটি ছিল।

মতিউরের বাড়ির সামনে যে সরু খালটি আছে, সেটার দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। এই খালের দুই পাড় সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা। দুই পারের বাসিন্দারা যাতে এই খালের পানি দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য প্রতিটি বাড়ির সামনে সান বাঁধানো ঘাট করে দেওয়া হয়েছে। খালটিতে অন্তত আটটি পাকা সেতু, দুই পারে পাকা সড়ক নির্মাণ করায় পুরো গ্রামের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে। বাড়ি থেকে একটু দক্ষিণ দিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ। এর পাশেই তিনতলা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লিনিকের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে হাওলাদার ফাউন্ডেশন নামের একটি তহবিল। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনা হচ্ছে।

শেয়ার করুন