আমি নিরক্ষর মানুষ, দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। অনেক মানুষ শিক্ষিত, কিন্তু কলেজ করার মন মানসিকতা নেই। তাই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা যাতে কলেজে পড়তে পারে সেজন্য জমি দান করেছি। আমার এলাকায় কলেজ হচ্ছে, এটাই তো আমার শেষ জীবনে এসে সুখের সংবাদ। কথাগুলো বলছিলেন, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমিদাতা আনসার আলী (৬৮)।
নিরক্ষর আনসার আলীর দেশের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা। ১৯৮১ সালে তিনি জেলার আলীকদম আসেন। সাতজন ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজন দিনমজুর ও একজন ড্রাইভার। বাকিরা বাড়িতে কাজ করেন।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে অবস্থিত আলীকদম উপজেলা, যার আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ৬২ হাজারের বেশি জনসংখ্যার বসবাস উপজেলাটিতে দীর্ঘ এই সময়ে শিক্ষায় স্থানীয়রা অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও এবার স্থানীয়রা এগিয়ে আসার কারনে হতে যাচ্ছে কলেজ।
আলীকদমে বসবাসরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এম নাবিল সাদিক ফাহিম বলেন, আমরা অনেকে বাইরে পড়াশোনা করার জন্য আসছি। পড়াশোনার খরচ বহন করতে অনেক পরিবারের হিমশিম খেতে হচ্ছে, কলেজ হলে অনেক অসচ্ছল মেধাবী ছাত্ররা উঠে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধু আনসার আলী নয়, কলেজের জন্য জমি দান করতে এগিয়ে এসেছে চারজন দাতা। মোট ৬.০৪ একর জায়গা দান করেছেন। দাতারা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ২.০০ একর, হাজী আবুল কাশেম এর পাঁচ সন্তান ১.০০ একর, মোঃ কালু এর ওয়ারিশ হাসান এবং হোসেন ১.০৪ একর, মোহাম্মদ আনসার আলী ২.০০ একর।
আরো জানা গেছে, এরমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান দানকৃত জায়গাটি ৩ শ্রেণির, আনসার আলী দুই একর ৩য় শ্রেণির, হাসান হোসেন দুই ভাইয়ের এক একর ৪ শতক প্রথম শ্রেণির, হাজী আবুল কাশেমের ওয়ারিশদের দেওয়া ১ একর প্রথম শ্রেণীর। দানকৃত জায়গার বাজারমূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন (এম.এ) বলেন, উপজেলা সৃষ্টিলগ্ন থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক এগিয়েছে। এরমধ্যে অপূর্ণ ছিলো কলেজ, তবে সর্বোপরি জমি দাতাসহ সবার সুনজর থাকার কারণে কলেজ স্থাপন হতে যাচ্ছে।
বান্দরবানের ৭টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা কলেজ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ভূমি না পাওয়া, স্থানীয় নেতাদের একাংশের বিরোধীতার কারনে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, ফলে স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের উপজেলার বাইরের কলেজে ভর্তি হয়ে অধ্যায়ন করে আসছে, যা অত্যান্ত ব্যায়বহুল।
গত ২৯ মে আলীকদম সফরে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, জেলার ৬টি উপজেলায় কলেজ হলেও আলীকদমে কোন কলেজ নাই। আপনাদের নেতাদের দূরদৃষ্টি নাই। উপজেলার নেতাদের জিজ্ঞেস করেন, কলেজ নাই কেন? নেতৃত্বে দিলে সাধারণ মানুষ মনে রাখে এমন কাজ করতে হবে। মূলত পার্বত্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর স্থানীয়রা কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্দ্যেগ নেওয়ার পাশাপাশি ভূমি দান করতে এগিয়ে আসে।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব বলেন, প্রশাসন ও সরকারের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন পর আলীকদম উপজেলায় কলেজ হতে যাচ্ছে। আলীকদম কলেজ স্থানীয়দের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে।