জলবায়ু তহবিলের টাকায় কেনা একটি দৃষ্টিনন্দন বাস চার বছর ধরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণের গাছতলায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে মূলত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বাসটি কেনা হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় বাসটিতে ধুলাবালু জমেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসটি নষ্ট হচ্ছে বলে খোদ কর্মকর্তারাই মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বাসটি কেনা হয়েছিল। কর্মকর্তাদের অদক্ষতা-অনভিজ্ঞতার কারণে বাসটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিবর্তে এখন পড়ে আছে। বাসটি ব্যবহারের জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বাসটি কেনা হয়েছিলছবি: প্রথম আলো
দেশের একটি সংস্থার মাধ্যমে ২০২০ সালের মার্চে বাসটি কেনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি)। বিসিসিটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। বিসিসিটির কার্যালয় রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত।
বিসিসিটি সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একতলা বাসটি কেনা হয়। ব্যয় হয় দেড় কোটি টাকা। নাম দেওয়া হয় ‘জলবায়ু বাস’। বাসের ভেতরে যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বসাতে খরচ হয় আরও এক কোটি টাকার মতো।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। এই তহবিলের টাকায় বাসটি কেনা বলে বিসিসিটি সূত্র জানায়। এ তহবিলের টাকায় অনিয়ম-দুর্নীতির নানা খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে আগে এসেছে।
বিসিসিটি সূত্র জানায়, বাসটি কেনার আগে কারও মতামত নেওয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে যে অভিজ্ঞতা ও জনবল দরকার, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেই। বিসিসিটির দপ্তরে বাসটি রাখারও জায়গা নেই। তাই রাখা হয় আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে। এ ছাড়া প্রকল্প শেষ হলে বাসটির কী হবে, তা–ও ভাবনায় নেওয়া হয়নি।
বাসচালক ও সহকারীর (হেলপার) বেতন-ভাতা, তেলের খরচ কীভাবে জোগান দেওয়া হবে, সে বিষয়ে চিন্তা না করেই তড়িঘড়ি করে বাসটি কেনা হয় বলে বিসিসি সূত্র জানায়। ফলে যে উদ্দেশ্যে বাসটি কেনা হয়েছিল, তা অর্জিত হয়নি।
বিসিসিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বাসটি কেনার পরপরই দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বাসটি ব্যবহার করা যায়নি।