পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে আর্মড পুলিশের মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু হচ্ছে শিগগির। এরই মধ্যে পুলিশের মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরুর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছে। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী গহিন পাহাড় থেকে প্রত্যাহার হওয়া সেনা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় মাউন্টেন পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়নে একজন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) প্রধান থাকবেন। ডিআইজি কার্যালয়ে দুজন এডিশনাল ডিআইজি এবং পৃথক তিন জেলা ব্যাটালিয়নে একজন করে মোট তিনজন অতিরিক্ত ডিআইজি থাকবেন। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একজন ডিআইজিসহ ২ হাজার ২৬০ পদ সৃষ্টির সম্মতি মিলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই মাউন্টেন পুলিশ যাত্রা শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা) ফারুক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেটি যাচাই-বাছাই শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ২৬০টি পদ সৃজনে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই শেষে ছাড় পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সচিব কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর পৃথক তিনটি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু হতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, যাত্রা শুরুর পর রাঙামাটি পার্বত্য এলাকায় ১৮ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন, বান্দরবানে ১৯ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন এবং খাগড়াছড়িতে ২০ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করবে। এই তিনটি ব্যাটালিয়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া ২ হাজার ২৬০টি পদের মধ্যে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন পুলিশ সুপার, ২১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২১ জন সহকারী পুলিশ সুপার, চারজন মেডিকেল অফিসার, ২৩ জন নিরস্ত্র পরিদর্শক, ৪৮ জন সশস্ত্র পরিদর্শক, ৪০ জন নিরস্ত্র উপপরিদর্শক, ২০৭ জন সশস্ত্র উপপরিদর্শক, ৫১ জন নিরস্ত্র সহকারী উপপরিদর্শক, ২০৭ জন সশস্ত্র সহকারী উপপরিদর্শক, ৩৯৬ জন নায়েক এবং ১ হাজার ২২৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
এসব জনবলের মধ্যে ডিআইজির কার্যালয়ে দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি ছাড়াও দুজন পুলিশ সুপার, তিনজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার, পাঁচজন পরিদর্শক, ১০ জন উপপরিদর্শক, ১২ জন সহকারী উপপরিদর্শক ৬ জন নায়েক এবং ২৫ জন কনস্টেবলসহ মোট ৭০ জনের জনবলের কথা রয়েছে প্রস্তাবনায়। বাকি জনবলের মধ্যে প্রতিটি ব্যাটালিয়নে একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে তিনজন পুলিশ সুপারসহ মোট ৭৩০ জন করে জনবল থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ওঅ্যান্ডএম বিভাগের একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ২০২১ সালের মার্চে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাউন্টেন পুলিশের জন্য ডিআইজি কার্যালয়সহ ৩টি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফের পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ডিআইজি কার্যালয়সহ পৃথক তিনটি ব্যাটালিয়ন গঠনে ২ হাজার ৬৫০টি পদ সৃজনের সংশোধিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রস্তাবনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত বছরের মে মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিন পার্বত্য জেলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়।
পার্বত্য এলাকার জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় এমন দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে থানা পুলিশের সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব এলাকায় গাড়িতে যাতায়াতও নেই। স্থানীয় অপরাধের পাশাপাশি পাহাড়ে নানা ধরনের নিত্যনতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতা, মাদক ও চোরাচালান ঠেকানো স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে পুরোপুরি সম্ভব নয়। পুলিশের মাউন্টেন ব্যাটালিয়নগুলো পাহাড়ের এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্প তৈরি করে দায়িত্ব পালন করলে পাহাড়ে নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে। তা ছাড়া পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি জনতার সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবেন এসব ব্যাটালিয়ন সদস্য।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মাউন্টেন পুলিশ ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরুর আগে এসব ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেওয়া পুলিশ সদস্যদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তারা যাতে পাহাড়ে নানা প্রতিকূল পরিবেশে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে।