নিয়মিত করদাতাদের ‘জবাই’ করবেন না, সরকারের খরচ কমান—নাসিম মঞ্জুর
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 29-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সরকারের ব্যয়সংকোচনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হবে। সারা জীবন আমরা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করব আর কর আদায়ের জন্য একই মানুষকে ‘জবাই’ করব, তা হতে পারে না।’

তিনি আজ বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: পরিপ্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন। আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের পাশাপাশি অতিথি ছিলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় ডিজিটাল লেনদেনের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা ও করণীয়বিষয়ক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

 

 

আলোচনায় সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আগামী ২০–২৫ বছরে দেশের জনমিতির সুবিধা নিতে হলে উৎপাদনশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। বৈশ্বিক উৎপাদন খাতের ২৮ শতাংশ এখনো চীনের দখলে। পৃথিবীতে তৈরি হওয়া চারটি জিনিসের একটি তৈরি করে চীন। উৎপাদনশীল খাত ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুযোগ খুবই সীমিত। অথচ আমরা দেখছি, দেশে কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ দেশ থেকে বিনিয়োগও সরে যাচ্ছে।’

এ সময় তাইওয়ানের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের যৌথ বিনিয়োগ উদ্যোগের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ বছর তাদের সঙ্গে মিলে একটি নতুন কারখানা করার কথা ছিল। কিন্তু তারা এখন সেটি এ দেশে না করে ইন্দোনেশিয়াতে সরিয়ে নিচ্ছে। নিরাপত্তাসহ নানা সমস্যা আছে। তবে তারা আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে জানিয়েছে, এ দেশে উৎপাদন খরচের কোনো ধারণা করা যায় না। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান কমে যাচ্ছে। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতে ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্ত ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালে এসে সেটি অনেক কমে গেছে। কেন উৎপাদন ইউনিটের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। দেশে ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিযোগী দেশগুলো কীভাবে ব্যবসার খরচ কমাচ্ছে, সেটি দেখে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। এ ক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াকে আমরা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে কারখানা স্থানান্তরের সুযোগ সবচেয়ে বেশি।’

 

নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার হুন্ডির মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। বিদেশি চিকিৎসাসেবাসহ নানা খাতে এই অর্থ দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। তাই এসব লেনদেনকে ডিজিটালের আওতায় আনা দরকার। বিদেশে চিকিৎসাসেবার খরচকেও আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থার মাধ্যমে এটির একটি সমাধান করা যেতে পারে।

ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা ভারতের উদাহরণকে কাজে লাগাতে পারি। অ্যামাজন গ্লোবাল সেলিং প্রোগ্রামের আওতায় তারা পাঁচ বছরে প্রায় দেড় লাখ ভারতীয় রপ্তানিকারক অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে এক ফ্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। এসব উদ্যোক্তারা যেসব পণ্য রপ্তানি করেছেন, তার পুরো লেনদেনটি হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসে ছোট ছোট জুতা প্রস্তুতকারক, ফুল প্রস্তুতকারকেরাও তাঁদের পণ্য রপ্তানির সুযোগ পেয়েছেন। আমাদের দেশেও এ ধরনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করতে পারলে টাকাও অন্য কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ডিজিটাল লেনদেনকে জনপ্রিয় করতে হলে প্রণোদনারও ব্যবস্থা করতে হবে।


 

শেয়ার করুন