নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাঁর স্বজনদের অপহরণের ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের শ্যালক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন।
সোমবার সকালে দুজনকে অপহরণের পর নিজে অপহৃত হওয়ার আগে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিযোগ করেন।
লুৎফুল হাবীব উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তিনিই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে লুৎফুল হাবীবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
এর আগে সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ারের ভাই এমদাদুল হক ও সহযোগী আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। এরপর দেলোয়ার হোসেন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চান। কিন্তু তখন পর্যন্ত সহযোগিতা পাননি। তখন তিনি নাটোর আদালত চত্বরে দুজন সাংবাদিকের কাছে ঘটনাটি জানাতে যান। এ সময় এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাঁর ভাইয়ের অপহরণের ঘটনাটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের নেতৃত্বে হয়েছে। তিনি এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চান।
পরে বিকেল পৌনে চারটার দিকে আরেক ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে যান দেলোয়ার। কিছুক্ষণ পর একটি মাইক্রোবাসে দুর্বৃত্তরা ওই কার্যালয়ের সামনে এসে দেলোয়ারকে কিলঘুষি মারতে মারতে তুলে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে একজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। ওই সাংবাদিক প্রথম আলোকে জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ বিষয়ে মোহন আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনিও ফোন ধরেননি।
বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় নিজ বাড়ির সামনে দেলোয়ারকে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম সেখানে ছুটে যান। পরে পুলিশ পাহারায় তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে তাৎক্ষণিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেলোয়ারের ভাই এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার ভাই অচেতন অবস্থায় আছে। তাঁকে আইসিইউতে নিতে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আইসিইউতে বেড না থাকায় নেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ। সবাই দোয়া করবেন।’
আইসিইউতে নেওয়ার আগে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত দেলোয়ার হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তখন তাঁর চোখ, মুখ, বুক, পিঠ, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল রাত ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেই রোগীর স্বজনেরা সিরিয়াল দিয়েছিলেন। কিন্তু বেড খালি না থাকায় নেওয়া হয়নি। এখন নেওয়া হচ্ছে।’
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী প্রার্থীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর স্বজনদের মামলা করতে বলা হয়েছে। তাঁরা মামলা দেননি। মামলা দিলে পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রার্থীর ভাই এমদাদুল হক বলেন, ‘ভাইয়ের জীবন নিয়ে টানাটানি। মামলা করব কীভাবে? তবে সময় হলে অবশ্যই মামলা করব।’