বিএনপি-খেলাফত মজলিস বৈঠক, এ বছরেই নির্বাচন করাসহ ৭ বিষয়ে ঐকমত্য
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 22-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একসময়ের ‘জোটচ্যুত’ দল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করল বিএনপি। আজ বুধবার দুপুরে গুলশানের কার্যালয়ে দলটির প্রধান দুই নেতাসহ ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তাঁরা প্রায় দুই ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

বিএনপি ও খেলাফত মজলিস—দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে।

 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বরিশালের চরমোনাইতে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে সেখানে তাঁরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। দল দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আদর্শিক কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যেই জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাই পীরের বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। এটিকে দল দুটির আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

আজ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি সামনে আনেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যাঁরাই রাজনীতি করেন, তাঁরা রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাদের সঙ্গে মতের মিল হবে, তাদের সঙ্গে কাজ করার চিন্তা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা থাকার তো কোনো কারণ নেই।’

 

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একসময় এক দল আরেক দলের বিরোধিতা করেছে, সমালোচনা করেছে, আবার আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা একমত হয়েছে, এতে অস্বাভাবিক কী আছে! আজকে যারা একমত, কালকে তারা একমত না–ও হতে পারে। এটাও ঘটেছে বাংলাদেশে বহু, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে! কাজেই এ বিষয়গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার বা মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারা (জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন) তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে যা উচিত মনে করবে, নিশ্চয়ই তা করবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন আমাদের আন্দোলনের সাথি ছিলেন, একসঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি, যুগপৎ আন্দোলন করেছি এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যারা অত্যন্ত সক্রিয় ছিল, তার মধ্যে খেলাফত মজলিস অন্যতম।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছেন। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কী করণীয়, এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে একমত হয়েই আন্দোলন করেছি বহু বছর ধরে। এ আলোচনায় আমাদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই, আমরা একমতই হয়েছি।’

বিএনপি–খেলাফত, ঐকমত্য যেসব বিষয়ে

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জাতির স্বার্থে ফ্যসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য হওয়ার জরুরি। এ ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাতটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তা হলো জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত রাখা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে; ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত ও ধর্মীয় সম্প্রীতির রক্ষার জন্য সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে; পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে; খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা; আওয়ামী সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।’

বৈঠকে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের নেতৃত্বের দলের ৯ জন নেতা অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে ছিল খেলাফত মজলিস। ২০২১ সালে তারা জোট ছেড়ে যায়। জোট ছাড়ার পর এই প্রথম তারা বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠনিক বৈঠক করল; যদিও গত মাসে খেলাফত মজলিসের সম্মেলনে তারা বিএনপির মহাসচিবসহ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।


 

শেয়ার করুন