পাঁচ বছর আগে পরিচয়। দুজনই পোশাকশ্রমিক। বছরখানেক পর ভালোবেসে দুজনে বিয়ে করেন। এরপর স্বামী জোবাইর উল্লাহ (৩১) ভালোবাসার বদলে নির্যাতন করতে থাকেন স্ত্রী ইয়াসিমন আক্তারকে (২৫)। জড়িয়ে পড়েন অন্য সম্পর্কে। ভালোবাসার মানুষটার এ নির্যাতন থেকে বাঁচতে আদালতে মামলা করেন ইয়াসমিন। এতে আরও ক্ষেপে যান স্বামী। শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষটাই গলা টিপে হত্যা করেন ইয়াসিমনকে। এরপর তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার চান মিয়া মুন্সী রোড এলাকায় তালাবদ্ধ একটি বাসা থেকে গত ২২ মে ইয়াসিমেনর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় জেলার আনোয়ারা থেকে গত রোববার জোবাইর উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন আকবর প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করায় স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বাসরোধে খুন করেন স্বামী জোবাইর। পরে তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে পুলিশ আনোয়ারা থেকে জোবাইরকে গ্রেপ্তার করে। তিনি স্ত্রীকে শ্বাসরোধে খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আদালতের নির্দেশে জোবাইরকে কারাগারে পাঠানো হয়। শিশুটিকে নানির জিম্মায় দেন আদালত।
পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন জোবাইর ও ইয়াসমিন। তাঁদের সংসারে তিন বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য ইয়াসমিনকে নির্যাতন করতে থাকেন স্বামী জোবাইর। অন্য নারীর সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০২১ সালের শেষের দিকে আদালতে মামলা করেন ইয়াসমিন। কিন্তু মামলা পরিচালনা না করায় সেটি খারিজ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে আরেকটি মামলা করেন ইয়াসমিন। এসব নিয়ে জোবাইর তাঁর স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে গত ২২ মে নগরের চকবাজারের ভাড়া বাসায় গলা টিপে হত্যা করেন স্ত্রী ইয়াসমিনকে। তখন বাসায় ছিল শুধু তাঁদের তিন বছরের মেয়ে। তার সামনেই মাকে খুন করেন বাবা। পরে কন্যাসন্তানকে নিয়ে বাসা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যান জোবাইর। পরদিন সকালে বাসার মালিককে ফোন করে জানান, তাঁর বাসায় যাতে একটু খোঁজ নেওয়া হয়। বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তালা ভেঙে দেখতে পায়, বাসার মেঝেতে ইয়াসমিনের নিথর দেহ পড়ে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।