ভোটারের বয়স ১৬, এমপি প্রার্থীর বয়স ২৩ বছর চায় এনসিপি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 06-05-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

কোনো ব্যক্তি বা দল যাতে দেশের পুরো শাসনব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একই সঙ্গে ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ বছর এবং সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে দলটি। বর্তমানে ১৮ বছর বয়স হলে নাগরিকেরা ভোটার হতে পারেন। আর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বয়স হতে হয় ন্যূনতম ২৫ বছর।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিপির নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। আর এনসিপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, আরমান হোসাইন ও জাবেদ রাসিন।

 

বৈঠক শেষে বিকেলে আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারকে কোনো বায়বীয় অবস্থায় আমরা ফেলে রাখতে চাই না। যেকোনো সময়ই নির্বাচন হতে পারে। তবে তার আগে মৌলিক সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

ভোটার হওয়ার ও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ তাদের তরুণদের ১৬ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। আমরা দেখতে পাই, তরুণ প্রজন্মের কাছে যে পরিমাণ তথ্য থাকে, তাতে এই বয়সে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।’

বৈঠকে তথ্যপ্রাপ্তিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এনসিপির সদস্যসচিব। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং পুলিশ সংস্কার নিয়ে এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করবে বলেও জানান তিনি।

 

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের একটা রূপরেখা তুলে ধরেছি। আমরা মনে করি, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুষ্ঠু গণতন্ত্র নিশ্চিতে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন আবশ্যক।’

কোনো ব্যক্তি বা দল যাতে দেশের পুরো শাসনব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দিয়েছেন বলে জানান সারজিস আলম। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী মনোভাবের যে উপকরণগুলো রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। যেখানে জনগণের ভোট, মতামত এবং অংশগ্রহণ সার্বিক নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পক্ষে এনসিপির অবস্থানের কথা জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, এনসিসি নির্বাহী বিভাগকে জবাবদিহি করার এবং সাংবিধানিক পদে নিয়োগের কাজটি করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ আসনভিত্তিক করার এবং উচ্চকক্ষে ভোটের আনুপাতিক হারে আসন নির্ধারণের প্রস্তাব করেছি।’

 

আলোচনায় এককেন্দ্রিক ক্ষমতার বিলুপ্তি; নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার; স্বাধীন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং সাংবিধানিক পদে স্বাধীন নিয়োগের ওপর জোর দিয়েছে এনসিপি।

এর আগে সকালে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’


 

শেয়ার করুন