কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোহিঙ্গা যুবক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর নাম আলী জোহার (৩০)। তাঁর দাবি, সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে ফেরার পথে মিয়ানমারের অংশ থেকে আকস্মিক ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করে থাকতে পারেন এই রোহিঙ্গা যুবক।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আলী জোহারের ভাষ্য, তাঁর বাবার নাম হামিদ হোসেন। তিনি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে পরিবারের সঙ্গে উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দ্বীপে আটকে পড়া লোকজনকে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু জায়গা না হওয়ায় দ্বীপে আটকে থাকা সবাই সেই ট্রলারে উঠতে পারেননি। ওই দিন বিকেলে ৩০ জন মিলে একটি কাঠের ট্রলার ভাড়া করে রওনা দেন। শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাশ থেকে কূলে ওঠার কথা থাকলেও ট্রলারের মাঝি সেটা না মেনে তাঁদের নিয়ে যান শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব পাশের ঘাটের দিকে।
আলী জোহারের দাবি, তাঁদের বহনকারী ট্রলারটি নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব পাশে পৌঁছালে আকস্মিক মিয়ানমার অংশ থেকে দুটি ট্রলার বের হয়ে তাঁদের কাছাকাছি এসে গুলি করে। সেই গুলি এসে লাগে তাঁর ডান পায়ে। গুলি লাগার পর তিনি অচেতন হয়ে যান। এরপর চেতনা ফিরলে দেখেন, তিনি উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরের দিন শুক্রবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
সেন্ট মার্টিন ট্রলার সার্ভিস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে সেন্ট মার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে তিন শতাধিক লোককে কোস্টগার্ড ও বিজিবির সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে সাগর উপকূল দিয়ে টেকনাফ নিয়ে যান। এরপর কোনো ট্রলার আর সেন্ট মার্টিন ছেড়ে যায়নি। আলী জোহারকে কখনো সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দেখা যায়নি। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার তিনটি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফ যায়নি। নাফ নদীতে গোলাগুলি হচ্ছে, তাই কোনো ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আলী জোহার হয়তো মিথ্যাচার করছেন।
টেকনাফের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা যুবক সন্ত্রাসী কোনো দলের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এ জন্য তিনি মিথ্যাচার করছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা যুবক সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে টেকনাফ আসার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—এ ধরনের কোনো তথ্য নেই।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, বৃহস্পতিবার বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের মালিকানাধীন তিনটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক মানুষ বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ পৌঁছান। এর বাইরে আর কোনো ট্রলার নাফ নদী কিংবা বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ আসেনি। ওই যুবকের দাবির বিষয়ে সব মাধ্যম থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তিনি হয়তো মিয়ানমারের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে চিকিৎসার জন্য মিথ্যা কথা বলছেন।