‘শেফাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের, সব শেষ হয়ে গেল’
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 11-06-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

‘অনেক স্বপ্ন ছিল শেফা লেখাপড়া শেষ করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। দুই দিন আগেও ওর বড় বোনকে মেসেজ দিয়ে অনলাইন ক্লাসের জন্য একটি ল্যাপটপ লাগবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কিছুই বুঝতে পারলাম না।’ কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেফা নূর ইবাদির বাবা মো. শাহজাহান রাঢ়ী।

গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাঠকক্ষ থেকে শেফা নূরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শেফা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। গতকাল সোমবার বিকেলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার ভিকাখালী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মা–বাবা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেউ শেফা নূরের এমন অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বাড়িতে এখনো চলছে মাতম।

আজ মঙ্গলবার সকালে ভিকাখালী গ্রামে শেফা নূরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শেফার কবরের পাশে চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন বাবা মো. শাহজাহান। স্বজনেরা তাঁকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। শেফার মা বারবার অচেতন হয়ে যাচ্ছিলেন। স্বজন ও প্রতিবেশীরাও শোকাহত ছিলেন।

শেফা নূরের বাবা মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার তিন মেয়ের মধ্যে শেফা সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। জীবনে কখনো তাকে পড়ার টেবিলে বসার কথা বলতে হয়নি। বিয়ের কথা বললে শেফা বলত, লেখাপড়া শেষ করে মা–বাবার আশা পূরণ করবে আগে, তারপর বিয়ের কথা ভাববে। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের, সব শেষ হয়ে গেল।’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা।

শেফা নূরের বড় বোন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেফার সঙ্গে সব সময় আমার যোগাযোগ হতো। যে দিনের ঘটনা, সেদিন রাত ১০টার দিকেও আমার সঙ্গে তার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। সে আমার খোঁজ নিয়েছে, আমি রাতে খেয়েছি কি না। কিন্তু তার ঘণ্টাখানেক পরই ওর সহপাঠীদের মাধ্যমে জানতে পারি এ দুর্ঘটনার কথা। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি।’

শেফা নূর আত্মহত্যা করবেন, এটা কখনো ভাবতে পারেননি জানিয়ে তাঁর বোন বলেন, ‘কোথাও এ ধরনের ঘটনা (আত্মহত্যা) শুনলে আমাদের দুই বোনের মধ্যে আলোচনা হতো। সে এসব কখনোই সমর্থন করত না। বরাবরই আত্মহননকে ঘৃণা করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেফা মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ওর ইচ্ছা ছিল আমি আইনজীবী আর ছোট বোন হিসেবে ও বড় সাংবাদিক হবে। কত স্বপ্নই না দেখতাম ওকে নিয়ে। সব শেষ হয়ে গেল।’

শেয়ার করুন