সংস্কারের জন্য সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, সেগুলো তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। তারপর একপর্যায়ে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যাবে সরকার। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আজকের সংবাদ ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক এরশাদ সরকারের সময়ও এ রকম কিছু সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে তা বাস্তবায়ন করে যেতে না পারার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে এবারের সংস্কারকাঠামো বাস্তবায়নের বিষয়েও জানতে চান
জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এরশাদ সরকারের সঙ্গে এই সরকারের বড় পার্থক্য রয়েছে। এই সরকার একটি গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। এই গণ-অভ্যুত্থানে দুটি শব্দ ছিল। একটি হলো বৈষম্যবিরোধী, আরেকটি হচ্ছে সংস্কার। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি প্রকৃত গণতন্ত্রের দিকে দেশটিকে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু এরশাদ সরকারে সঙ্গে এই সরকারের মৌলিক পার্থক্য আছে, তাই সেই সরকারের কর্মপদ্ধতি, কর্মপরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘এই যে কমিশনগুলো হলো, প্রাথমিকভাবে আমরা আশা করছি, তিন মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিতে পারবে। এগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে এর সপক্ষে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে পারি কি না। এ জন্য সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত চাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নিশ্চয়ই এত দিনে উপলব্ধি হয়েছে, যে এরশাদ সরকার করে যেতে পারেনি, তার ফল কী হয়েছে, এটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখেছে। তারাও কোনো সংস্কার করেনি। এর ফল কী হয়েছে, এটাও ৫ আগস্ট গোটা জাতি দেখেছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিশ্চয় অজনপ্রিয় হয়ে আবার একই রকম ফলাফল দেখতে চাইবে না। এ জন্য প্রথম থেকেই আমরা মতবিনিময়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। একপর্যায়ে আমরা সংলাপে যাব। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছি। রাজনৈতিক দলগুলোই ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে যে আগে সংস্কার, পরে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। কাজেই আজকের দিনে বাস্তবতা ও প্রেক্ষিতও ভিন্ন।’
গতকাল জাতির জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর আগামী ১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারবে। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সেগুলোর কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন। এরপর কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কারভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।