চট্টগ্রামের নগরের ব্যস্ত সড়কের মধে৵ অন্যতম জাকির হোসেন সড়ক। এই সড়কের ওয়্যারলেস এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী ও পথচারী চলাচল করেন এই অংশে। রোগী ও সাধারণ পথচারীদের পারাপারের জন্য ২০২০ সালে হাসপাতালের সামনে চলন্ত সিঁড়িযুক্ত পদচারী–সেতু (এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ) নির্মাণ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নির্মাণের পর মাত্র দুই মাস চালু ছিল এই চলন্ত পদচারী–সেতুটি। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম এই চলন্ত সিঁড়িযুক্ত পদচারী–সেতুটি স্থাপন করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ না থাকায় সেতুটির বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ভেঙে গেছে। সেতুতে ওঠার পথে ফটকগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকে। স্থানীয় লোকজন জানান, চালুর পর দুই মাস এটি পথচারীরা ব্যবহার করেন। এরপর করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার পর সেতুটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে চালু হয়নি সেতুটি।
জাকির হোসেন সড়কে নগরের অভ্যন্তরীণ পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকাগামী গাড়িও চলাচল করে। সাবেক সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের ইচ্ছায় এই চলন্ত পদচারী–সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে এই পদচারী–সেতু এড়িয়ে লোকজন আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হন।
স্থানীয় বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন বলেন, উদ্যোগ ভালো ছিল; তবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এটি এখন পরিত্যক্ত। জিইসি থেকে এ কে খান মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য এই একটিই পদচারী–সেতু ছিল। সেটিও বন্ধ। ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় পথচারীদের।
বেহাল পদচারী–সেতু, তদারকি নেই
পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় বর্তমানে সেতুটি বেহাল হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুতে ওঠার দুই পাশে চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে, তবে বর্তমানে তা বন্ধ। সিঁড়ির নয়টি ধাপই নেই। সেখানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে পড়েছে। এ ছাড়া মরিচাও ধরেছে তাতে। পুরো সিঁড়িতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে আবর্জনা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। তবে গত চার দিন সেখানে গিয়ে কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতুর কাজ করার জন্য করপোরেশনের কাউকে গত দুই বছরে দেখেননি। রোগীদের পারাপারের জন্য সেতু নির্মাণ করা হলেও রোগীরা সড়কের ওপর দিয়ে হাসপাতালে আসা–যাওয়া করেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, সাবেক সংসদ সদস্যের ইচ্ছায় হাসপাতালের সামনে এটি নির্মাণ করা হয়। তবে ১০০ মিটার দূরে ওয়্যারলেস মোড়ে এটি নির্মাণ করা হলে আরও কার্যকর হতো বলে মনে করেন তাঁরা। এ ছাড়া চলন্ত সিঁড়ি সব সময় চালানো ব্যয়বহুল। তাই এটি আর চালু করা হয়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ বন্ধের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সেটি হাতে পেলে এটি চালু ও মেরামত কিংবা সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’
প্রতিবেদনের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
‘সঠিক পরিকল্পনার অভাব’
দীর্ঘদিন ধরে এই পদচারী–সেতু ব্যবহৃত না হওয়ার পেছনে পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণের আগেই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ ভেবে তারপরই তা নির্মাণ করা উচিত বলে মতামত তাঁদের। এদিকে এই সেতু ব্যবহৃত না হলেও চট্টগ্রাম নগরের আরও ৩৮টি পদচারী–সেতু করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, নগরে পথচারীদের নিরাপদ চলাচল ও রাস্তা পারাপারের জন্য এ ধরনের যান্ত্রিক পদচারী–সেতু প্রয়োজন। তবে সেটি হতে হবে পরিকল্পনামাফিক।
অধ্যাপক রাশিদুল হাসান বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার আগে তাঁর সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, সবকিছু মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। এর জন্য প্রতি অর্থবছরে বরাদ্দও রাখা উচিত। নগরে জনসাধারণের জন্য সব ধরনের প্রকল্পকে আমরা সাধুবাদ জানাই। পরিকল্পনা করে তারপর বাস্তবায়ন করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে।’