২০২৫ সালে চাকরির বাজারে যে ১২টি প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 31-12-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

উত্তরোত্তর ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তি খাতে এক বিপুল সমৃদ্ধির বছর হতে যাচ্ছে ২০২৫। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে চাকরির বাজারে। অধিকাংশ নিয়োগের কর্মযজ্ঞগুলোতে আধিপত্য থাকবে আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতার। এআই থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তার ব্যবহারিক জ্ঞান ২০২৫-এর পরেও সর্বোচ্চ চাহিদার স্থানটি ধরে রাখবে। চলুন, নতুন বছরের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতাগুলো দেখে নেওয়া যাক। ফুলটাইম চাকরি এবং ফ্রিল্যান্সিং–নির্বিশেষ যেকোনো ধরনের কর্মক্ষেত্রে উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতাগুলো প্রয়োজন তা হলো—

১. ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট

ডিজিটালকরণের ধারাবাহিকতায় ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশাসনের মতো খাতগুলোতে প্রয়োজন হচ্ছে অ্যাপ ও সফটওয়্যার। বিভিন্ন ধরনের ডেস্কটপ সফটওয়্যারের পাশাপাশি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অপরিহার্য দক্ষতা হলো ফ্রন্ট-এন্ড ও ব্যাক-এন্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। সংগত কারণেই চাহিদা বাড়ছে ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপারদের, যা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।

 

২. ক্লাউড কম্পিউটিং

বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে অনলাইন বা ক্লাউড অবকাঠামো। এ অনলাইন কাঠামো গঠন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন পড়ছে ক্লাউড আর্কিটেক্ট বা ইঞ্জিনিয়ার। ফলে নিয়োগের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস), মাইক্রোসফট আজুরে এবং গুগল ক্লাউডের মতো ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে। এ দক্ষতাকে কেন্দ্র করে এক অভাবনীয় সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের রূপরেখা তৈরি হয়েছে, যা নিকট ভবিষ্যতে চাকরির বাজারকে নেতৃত্ব দেবে।

৩. ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন

একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপের ইন্টারফেস, নকশা ও অপারেশন সহজবোধ্য এবং সর্বজনীন না হলে তার গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়ে। অপর দিকে, একটি সর্বজনীন নকশার কারণে অ্যাপ বা সফটওয়্যারটিকে ঘিরে ব্যবহারকারীর ইতিবাচক অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। আর এখানেই আসে ইউজার ইন্টারফেস ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন শেখার প্রসঙ্গ। এ দক্ষতার মাধ্যমে আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মে ফুলটাইম চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আরও বাড়তে পারে।

 

৪. সাইবার নিরাপত্তা

বিভিন্ন ছোট-বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়। শুধু তা–ই নয়, একজন ব্যক্তির অ্যাকাউন্টও এই ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপদ নয়। ঘন ঘন এই সাইবার অপরাধের বৃদ্ধির কারণে, সংস্থা ও মানুষ উভয়েরই অনলাইন ডেটা রক্ষার জন্য দরকার হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, ইথিক্যাল হ্যাকিং এবং ঝুঁকি যাচাইয়ের দক্ষতা ২০২৫-এ কতটা মূল্যবান হতে যাচ্ছে!

৫. ডেটা অ্যানালাইসিস ও বিগ ডেটা

বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিপুলসংখ্যক ডেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। এখানে বিশেষত্ব পায় এসকিউএল, পাইথন ও ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলগুলোর ব্যবহারিক দক্ষতা। ব্যবসা, বিপণন, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স ও একাডেমিক গবেষণাসহ বিভিন্ন খাতে আজকাল নিয়োগ হচ্ছে ডেটা অ্যানালিস্ট এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট। নতুন বছরে এই ধারা আরও বেগবান হবে। পেশাদার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি পরিসংখ্যানবিদ, গণিতবিদসহ অন্য খাতের কর্মকর্তারাও এখন ঝুঁকে পড়ছেন এ দক্ষতাগুলো শেখার দিকে।

কম্পিউটিংয়ে এবং অন্য যেকোনো দক্ষতা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে দেখা হবে

কম্পিউটিংয়ে এবং অন্য যেকোনো দক্ষতা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে দেখা হবেছবি: বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

 

৬. ডেভঅপ্স ও অটোমেশন

খাবারের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় কলকারখানায় কম সময়ে উৎপাদন বাড়াতে অটোমেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো কাজের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলো চালনার ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে হলে ডেভঅপ্স অনুশীলন এবং অটোমেশন সরঞ্জামগুলোতে সিদ্ধহস্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফ্যাক্টরি–নির্ভর কর্মসংস্থানগুলোতে  এরই মধ্যে এর এক বিশাল অবস্থান তৈরি হয়েছে, যা সামনের বছরগুলোতে আরও প্রসারিত হবে।

৭. এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (এআর/ভিআর)

গেমিং, ই-স্পোর্টস এবং বিনোদন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা এবং ই-কমার্সের মতো বিভিন্ন খাতে বিস্তৃতি পাচ্ছে অগমেন্টেড এবং ভার্চু৵য়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি। তাই গ্রাহকদের সেবা প্রদানে বাস্তব অভিজ্ঞতা তৈরিতে ভিআর প্রযুক্তির দক্ষতা আগামী দিনে ক্রমে মূল্যবান হয়ে উঠবে।

 

৮. ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)

পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্ট অবকাঠামো ও পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইওটি ডেভেলপমেন্ট ও সেন্সর প্রযুক্তির দক্ষতা। আগামী বছরগুলোতে স্মার্ট শহর, কারখানা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং, স্মার্ট হোমস, স্মার্ট গ্রিড, পরিধানযোগ্য জিনিসপত্র ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়বে আইওটি-দক্ষ পেশাদারদের।

৯. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং (এমএল)

প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে এআই ও এমএলের সন্নিবেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় অনপেক্ষণীয় হয়ে পড়েছে দক্ষ পেশাদারদের উপস্থিতি। এ প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের দক্ষতা বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে প্রয়োগ করা হবে। ব্যবসা, প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা ও ফিন্যান্সের পাশাপাশি আরও নানা খাত এআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে আরও পেশাদারদের প্রয়োজন হচ্ছে।

১০. রোবটিকস ও অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল, উৎপাদন ও পরিবহনে অভূতপূর্বভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থা। সেই বিবেচনায় বলা যেতে পারে, আগামী বছরটি হতে যাচ্ছে রোবটিকস ও অটোমেশনের বছর। এই পরিপ্রেক্ষিতে পুরো সিস্টেম ডিজাইন, নিয়ন্ত্রণ ও স্বয়ংক্রিয়তা বজায় রাখার জন্য রোবটিকস ও অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

১১. ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও

ব্যবসা, নিউজ পোর্টাল ইত্যাদির ডিজিটালকরণের জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যবহুল দুটি বিষয় হচ্ছে এসইও এবং ডিজিটাল মার্কেটিং। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা এখন নির্ভর করে কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট টিম ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারনেট পাঠকদের পছন্দ-অপছন্দ নিরীক্ষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে গ্রাহক ধরে রাখার ওপর। এগুলোর প্রতিটি একজন ডিজিটাল মার্কেটিং পেশাদারের বিশেষত্বের জায়গা। সুতরাং, আসছে বছর নতুন মাত্রায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং পেশার।

১২. লো-কোড ও নো-কোড ডেভেলপমেন্ট

একটা সময় ছিল, যখন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি বা ব্যবহারের জন্য আবশ্যিকভাবে একজন আইটি বিশেষজ্ঞের দরকার হতো; কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ন্যূনতম কোডিং দক্ষতাতেই অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের সুযোগ থাকে। এই কার্যক্রম দ্রুত সমাধান দেওয়ার তাগিদে অনলাইন টুলস ব্যবহারে দক্ষ জনগোষ্ঠীর এক বিশাল ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।

পেশাগত ক্ষেত্রে যেখানে সর্বত্র ডিজিটাল রূপান্তর ঘটছে, সেখানে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপযুক্ত হাতিয়ার হলো এই চাহিদাসম্পন্ন প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলো। পরিবর্তনের সঙ্গে এই আলিঙ্গন কেবল ২০২৫-এ নয়, তার পরেও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠনে মাইলফলক তৈরি করবে।

শেয়ার করুন