সুর্যোদয়ের সাথে সাথে নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ কষ্ট বিদায় দিয়ে বাংলা নতুন বছরের শুভকামনার প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয়েছে বিজু উৎসব। আজ শুক্রবার সকালে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের কেরানী পাহাড়, রাজবাড়ী, ডিসি বাংলো ও গর্জনতলীর অংশে ফুল ভাসিয়ে আনুষ্টানিকভাবে পাহাড়ে ৩ দিনের ‘বিজু’ উৎসব শুরু করেছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর লোকজন।
চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ভোরে ভোরে নদীতে ফুল ভাসানোকে বলা হয় ফুল বিজু। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে পাহাড়ের নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আবাল বৃদ্ধ বণিতা এই ফুল বিজুতে যোগ দেয়। সমাজ কিংবা গোত্র ভেদে নদীর তীরে ফুল ভাসানো নিয়ে থাকে নানা আয়োজন। সমাজের রীতি অনুযায়ী এদিন ভোরে নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রকমের ফুল সংগ্রহ করে শুক্রবার ভোরে নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে দেয়।
প্রতিবছরের মত এদিন নদীতে ফুল ভাসাতে আসেন গর্জনতলীর বাসিন্দা ঝিনুক ত্রিপুরা, লক্ষী ত্রিপুরা ও জয়ন্ত চাকমা। তারা জানান, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ফুল বিজু আয়োজন করা হয়। পুরনো যত দুঃখ কষ্ট দুর করে, নতুন বছর যাতে সুখে শান্তিতে কাটে এই প্রার্থনা করা হয় নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে।
দিনটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদে জেগে উঠা দ্বীপে ত্রিপুরা কল্যান ফাউন্ডেশনের নানা আয়োজনে আনুষ্টানিক ভাবে ফুল ভাসানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, এমপি।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা কল্যান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাচাং বিদ্যুৎ কুমার ত্রিপুরার সভাপতি বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা প্রমূখ।
দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে বয়স্কদের স্নান, ঐতিহ্যবাহী পাজন রান্না, পাহাড়ী শিল্পীদের পরিবেশনায় গান ও নৃত্য এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে, ফুল ভাসানোর পর ঘরে ঘরে উৎসব বিরাজ করছে। টানা তিনদিন পাহাড়ের সর্ববৃহৎ এই উৎসবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মাতোয়ারা থাকে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও অনেকে যোগ দেন এ উৎসবে।