আগামী ৮ই মেই রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারি সম্ভাব্য পোলিং কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে ভোজ সভা করার অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি শহরজুড়েই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্ধী আরেক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট। প্রার্থীরা হলেন, বরকল উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিধান চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জ্ঞানজ্যোতি চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুচরিতা চাকমা।
রাঙামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে রাঙামাটি শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে বসে পোলিং কর্মকর্তাদের নিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অনুসন্ধান করে উক্ত ফুটেজের সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে এই প্রতিবেদক।
এছাড়াও ফুটেজে উপস্থিত থাকা বিভিন্ন বিদ্যালয়ের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) শিক্ষকরাও বৈঠকপরবর্তী খাওয়া-দাওয়ার বিয়ষটি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে প্রদত্ত অভিযোগপত্রের তথ্য ও অনুসন্ধানে জানাগেছে, আগামী ৮ই মে রাঙামাটির বরকল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিধান চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জ্ঞানজ্যোতি চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুচরিতা চাকমা বরকলে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য পোলিং কর্মকর্তাদের (যারা পেশায় স্থানীয় স্কুল শিক্ষক) সাথে নিয়ে চলতি মাসের ২৪ তারিখে রাঙামাটি শহরের বনরূপাস্থ আমার বাড়ি রেস্তোরা নামক একটি রেষ্টুরেন্টে বৈঠক করেছেন। উক্ত বৈঠকে নির্বাচনে সহযোগিতা চেয়ে মতবিনিময় করেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেছেন।
উক্ত সভায় বরকলের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দায়িত্বপালনকারি ১৮জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। সভায় উপস্থিত শিক্ষকদের আগামী নির্বাচনে দোয়াত কলম, টিউবওয়েল ও হাঁস মার্কা প্রতিকে শতভাগ ভোট আদায় করে দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে উক্ত সভায় উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বরকলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে উপরোক্ত তিন প্রার্থী কর্তৃক বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারই প্রেক্ষিতে আমার বাড়ি রেস্তোরায় ২৪শে এপ্রিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে শিক্ষক একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন মন্তব্য করে একজন শিক্ষক জানান, আমরা পাঁচজন পোলিং কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোট আদায়ের অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জনৈক শিক্ষক।
এদিকে উক্ত বৈঠকে খোদ শিক্ষকরাই তাকে ডেকে নিয়ে গেছেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুচরিতা চাকমা। তিনি জানান, আমরা তিনজন সেখানে নিজে থেকে যাইনি, আমাদেরকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এখন মিথ্যাচার করা হচ্ছে। কোন শিক্ষকের আমন্ত্রণে সেখানে গেলেন তার নাম ও মোবাইল নাম্বার দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি প্রতিবেদককে, আমি আপনাকে পরে ফোন দিবো বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জ্ঞানজ্যোতি চাকমা প্রতিবেদককে জানান, সেদিন আমি ও সুচরিতা আমাদের নির্বাচনী পোষ্টারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে উক্ত আমার বাড়ি রেস্তোরায় চা খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত শিক্ষকদের দেখে তাদের আহবানে ভাত খেতে বসেছিলাম। এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না বা নির্বাচনী আচরন বিধিতে একসাথে ভাত খাওয়ার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বরকল উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়াম্যান পদপ্রার্থী বিধান চাকমা জানান, এটা সম্পূর্ন মিথ্যা, আমি এই ধরনের কোনো সভায় উপস্থিত ছিলাম না।
শনিবার রাতে রাঙামাটিস্থ ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের রিটানির্ং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন এর কার্যালয়ে গিয়ে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এটা সত্য। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। তার আগেই আর কোনো মন্তব্য করতে চাইনা।
উক্ত ভোজসভার ভিডিও দেখুন সিএইচটি টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ফেসবুক পেইজে।